বাক্যহারার মুখের বাক্য শোনাল কৃ বু

বাক্যহারার মুখের বাক্য শোনাল কৃ বু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ এপ্রিল, ২০২৫

পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বাক্‌রুদ্ধ এক মহিলা। নাম অ্যান। কথা বলতে পারেন না। কিন্তু মনে তো কথা আসে। ওই মহিলার মনের না-বলা বাণীগুলির সংকেত উদ্ধার করে কৃ বু তাদের বাক্যে রূপান্তরিত করছে। তার পর সেই বাক্যগুলিকে একটি কৃত্রিম কণ্ঠস্বর মারফত শোনাতে পারছে। এমন নয় যে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কিন্তু তখন একেকটা পুরো বাক্য শেষ হওয়ার পর তবে সেটাকে শোনানো যেত। এখন শব্দগুলি মনে আসবা-মাত্র তাদের শনাক্ত করতে পারছে যন্ত্রটি এবং তিন সেকেন্ডের মধ্যে শুনিয়ে দিতে পারছে। ৩১ মার্চের নেচার নিউরোসায়েন্স পত্রিকায় এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
২০০৫ সালে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হবার পর অ্যান কথা বলার শক্তি হারিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে শল্যচিকিৎসা করে তাঁর মস্তিষ্কবল্কলের (সেরিব্রাল কর্টেক্স) উপরিতলে ২৫৩টি তড়িৎদ্বার সংবলিত কাগজের মতো পাতলা একটি আয়তক্ষেত্র বসানো হয়। এই আয়তক্ষেত্রটি একই সঙ্গে হাজার হাজার নিউরনের সম্মিলিত ক্রিয়াকর্ম রেকর্ড করতে পারে। মস্তিষ্ক আর কম্পিউটারের সম্মিলিত যেসব যন্ত্রকৌশল বাস্তব ক্ষেত্রে বাক্যপ্রবাহ নির্গত করতে পারে সেগুলোই হবে এই গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ের ধারক ও বাহক। কারণ ব্যবহারকারীর গলার স্বাভাবিক সুর, কণ্ঠের ওঠানামা ও ধরনকে তারা ফুটিয়ে তুলতে পারবে। আগেকার যন্ত্রকৌশলগুলি ছিল যেন হোয়াটস্যাপ সংলাপের মতন। তাতে কথাবার্তার স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকে না। গবেষকরা কৃত্রিম যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরটিকে অ্যানের সুস্থ অবস্থার কণ্ঠস্বরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছেন। বিশেষ অ্যালগরিদমে প্রশিক্ষিত হয়ে কৃ বু অ্যানের বিয়ের ভিডিও থেকে তাঁর গলার আওয়াজ শিখে নিয়েছে। সবশেষে যে-সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাতে অ্যান একটা পর্দায় ফুটে ওঠা ১০২৪টি শব্দ আর ৫০টি বিশেষ অভিব্যক্তি থেকে বেছে নিয়ে নীরবে মুখ থেকে ১০০টি বাক্য নির্গত করেন। মস্তিষ্ক-কম্পিউটার সংযোগ-সাধক যন্ত্রকৌশলটি প্রতি ৮০ মিলিসেকেন্ডে ( ১ মিলিসেকেন্ড=১/ ১০০০ সেকেন্ড) তাঁর স্নায়ুজালিকা ধরে নিতে থাকে। অ্যান নিঃশব্দে তাঁর বাক্যগুলি নির্গত করার ৫০০ মিলিসেকেন্ড আগে কাজ শুরু করে সেই যন্ত্রকৌশল। এইভাবে সেটি মিনিট পিছু ৪৭ থেকে ৯০টি শব্দ তৈরি করতে সক্ষম হয় (স্বাভাবিক কথাবার্তায় এই হার হল মিনিটে ১৬০)। এর আগের একটি সমীক্ষায় অ্যানকে যে-যন্ত্রকৌশলের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়েছিল সেটির তুলনায় এই হার অনেক উন্নত। একথা ঠিক যে এখন এ-যন্ত্রকৌশল ছোটো ছোটো বাক্যর ক্ষেত্রেই কার্যকর, যা স্বাভাবিক বাক্যস্রোতের তুলনায় বেশ শ্লথ। এই শ্লথতার মাত্রা যদি ৫০ মিলিসেকেন্ডের চেয়ে বেশি হয় তাহলে কিন্তু বাক্যের অর্থ গুলিয়ে যেতে শুরু করবে। গবেষণাপত্রর সহ-লেখক, স্নায়ু-শল্যবিদ এডওয়ার্ড চ্যাং জানিয়েছেন, ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমরা এই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সেন্সরের সংখ্যা বাড়ালে, কাজ আরও নিখুঁতভাবে করতে পারলে, সংকেতগুলির প্রক্রিয়াকরণ আরও ভালোভাবে করতে পারলে এ অবস্থা বদলাবে, অনেক উন্নত হবে’।
সূত্র: Nature 640, 295-296 (2025)
doi: https://doi.org/10.1038/d41586-025-01001-6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 16 =