বাতাসের বিষ

বাতাসের বিষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বাতাসের গুণমান খুবই খারাপ, দূষণে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দিল্লিতে। দিল্লির দূষণদাপট নিয়ে দেশজোড়া আলোচনা চলছে তবে এরই মাঝে পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলোর কী অবস্থা?
পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলোর বায়ু মানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় বায়ুর গুণমান ‘মাঝারি’, সূক্ষ কণা পদার্থ বা পার্টিকুলেট ম্যাটার PM 2.5 এর গড় মাত্রা ৬১ মিক্রোগ্রাম প্রতি ঘন মিটার হলেও শিল্প শহর ও শহরাঞ্চল যেমন আসানসোলে তা ৯৫.২ মিক্রোগ্রাম প্রতি ঘন মিটার এবং দুর্গাপুরে তা ৯৬.২ মিক্রোগ্রাম প্রতি ঘন মিটার যা মোটেও ভালো নয়। রেসপাইয়ার লিভিং সায়েন্সেসের অ্যাটলাস AQ প্ল্যাটফর্ম সর্বশেষ বায়ুর গুণমান বিশ্লেষণ করেছে, এবং এই বছর শীতের প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বায়ু মানের একটি বৈচিত্র্যময় পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। তারা তুলে ধরেছে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে দুর্গাপুর ও আসানসোলে বায়ুর মান খারাপ। অধ্যয়নটি জানিয়েছে নগরায়ন এবং শিল্প ও যানবাহন নির্গমনের প্রভাবে বিভিন্ন শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণ প্রকট হয়ে উঠেছে। শহরের পরিবেষ্টিত বাতাসে PM2.5 এর আধিপত্য উদ্বেগজনক। PM2.5 সবচেয়ে বিপজ্জনক, কারণ এটি ফুসফুসের মাধ্যমে অবাধে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে। ক্ষতিকারক রাসায়নিক হিসাবে বাতাসে PM2.5 এর উচ্চ ঘনত্বের সংস্পর্শে এলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পায়। ক্লিনিকগুলোতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাতাসের গুণগত মানের সূচক হল এয়ার কোয়ালিটয় ইনডেক্স বা একিউআই। একিউআই কোথায় ভালো, কোথায় খারাপ বা অত্যন্ত খারাপ— তা নিয়ে নির্দেশিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, বাতাসের গুণগত মানের সূচক যদি শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে তা হলে তা ভালো পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। ৫১-১০০ সন্তোষজনক, ১০১-২০০ সামান্য খারাপ, ২০১-৩০০ খারাপ, ৩০১-৪০০ খুব খারাপ, ৪০১-৫০০ অতি ভয়ানক। পরিবেশবিদরা দেখেছেন কলকাতার কিছু অঞ্চলে বায়ুর গুণমান মাঝারি মান অর্থাৎ ১০১-২০০ থেকে খারাপ অর্থাৎ ২০১-৩০০-র দিকে যাচ্ছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে শহরের বাতাসের মান আরও খারাপ হতে পারে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে শহরের কিছু অংশ, বিশেষ করে পূর্ব অংশ একটি ধোঁয়াশার চাদরে আবৃত ছিল, যা দৃশ্যমানতা হ্রাস করেছে। গবেষকদের মতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত কারণ যেমন বাতাসের গতি কমে যাওয়া, কুয়াশা তৈরি হওয়ায় কলকাতায় দূষণের মাত্রাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একজন প্রবীণ বিজ্ঞানী বলেন, আমাদের শহর-নির্দিষ্ট এলাকার পরিবর্তে সমগ্র অঞ্চলের জন্য প্রশমনের ব্যবস্থা প্রয়োজন। সমগ্র গঙ্গা-সিন্ধু অববাহিকা জুড়ে দূষণের মাত্রায় একটি স্পাইক দেখা গেছে আর এই অববাহিকার লেজের দিকে রয়েছে কলকাতা ফলে এটি নদীর গতিপথে প্রবাহিত দূষণের প্রধান প্রাপক হিসেবে প্রতিপন্ন হচ্ছে।