বালিতে চলা রোবট

বালিতে চলা রোবট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুলাই, ২০২৩

গবেষকরা একটা ছোটো রোবট তৈরি করেছেন যা বালিতে ৫ ইঞ্চি গভীরতায় যেতে পারে, প্রতি সেকেন্ডে তার গতি হল ১.২ মিলিমিটার বা বলা যায় ঘণ্টার হিসেবে প্রায় ৪ মিটার বা ১৩ ফুট প্রতি ঘন্টায়। গতি ধীর মনে হলেও ঝিনুক বা কেঁচো জাতীয় ভূগর্ভস্থ প্রাণীর মতোই এর গতি। চলাফেরার সময়ে কোনো বাধা সনাক্ত করতে রোবটটির ফ্লিপারের শেষে ফোর্স সেন্সর আটকানো হয়েছে। রোবটটি ওয়াইফাই এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত।
বায়ু বা জলে চলাচলকারী রোবটের তুলনায় বালির মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে রোবটের তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তি লাগে এবং এদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই এরা আরও সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিসিস্ট-এর একটি দল রোবট নিয়ে বহু গবেষণা করে দেখেন বালিতে কীভাবে রোবট চলাফেরা করতে পারে। বালিতে চলাফেরা বেশ কঠিন কারণ প্রথমত বালির দানার মধ্যে ঘর্ষণের ফলে শক্তি উৎপন্ন হয়; তাছাড়াও বালির মধ্যে কোনো বাধা অনুধাবন করতে অসুবিধা হয়; এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কখনো এটি তরলের মতো অনুভূত হয় কখনো বা কঠিনের মতো। তাই গবেষকরা রোবটের আকার অনেকটা মাছের মতো তৈরি করেন এবং একটা বেলচা-আকৃতির নাকও যুক্ত করেন। রোবটের কাঠামো তৈরি করার সময় গবেষকের দল প্রাণীদের পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে কচ্ছপের ছানার সামনের পাখনাগুলো বড়ো যার সাহায্যে ডিম ফোটার পরে তারা বেরিয়ে আসে। কচ্ছপের মতো ফ্লিপার, প্রপালসিভ ফোর্স বা সামনেরদিকে চলার জন্য শক্তি তৈরি করতে পারে। তাই তারা রোবটকে চালনা করা ও বাধা সনাক্ত করার জন্য কচ্ছপের ছানার মতো ফ্লিপার রোবটে যুক্ত করেন। এই ফ্লিপারের সাহায্যে তারা বালিতে চলতেও পারবে আবার বালি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতেও পারবে। তার ফ্লিপারের গতিবিধি দ্বারা উত্পন্ন টর্কের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে রোবট বালিতে থাকা বাধা সনাক্ত করে। এই ফ্লিপার তার শরীরের উপরে বাধা সনাক্ত করতে পারে, কিন্তু নীচে বা সরাসরি সামনের কোনো বাধা সনাক্ত করতে পারে না। রোবটটিকে বালির গভীরে রাখার জন্য, গবেষকরা তার নাকের পাশে দুটি ফয়েলের মতো পৃষ্ঠতল তৈরি করেছেন, যাকে তারা টেরাফয়েল বলেছেন। এটি রোবটের উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে, কারণ রোবটের নাক সর্বদা পৃষ্ঠের দিকে থাকে।
পরীক্ষাগারে ৫ ফুট লম্বা ট্যাঙ্কের পাশাপাশি গবেষকরা ইউসি সান দিয়েগো ক্যাম্পাসের কাছে লা জোলা সৈকতে রোবটটি পরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেছেন যে ভেজা বালিতে রোবটের গতি ধীর হয়ে গেছে, কারণ ভেজা বালি তাকে আরও প্রতিরোধ করছে। গবেষকরা চেষ্টা করছেন পরবর্তী ক্ষেত্রে রোবটের গতি বৃদ্ধি করতে ও বালি খোঁড়ার কাজ করাতে। গবেষণাটি অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস-এ প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + twenty =