
রোডেন্ট বা বাদামী ইঁদুররা পৃথিবীর মোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। এদের প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ২,৫০০। কাঠবিড়ালি, বীভার, উডচাকও এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু খরগোশ বা রাকুন রোডেন্টদের দলে নয়। তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে রয়েছে মুখগহ্বরে। এদের উপরের ও নীচের চোয়ালে মাত্র এক জোড়া দাঁত থাকে। ছেদন দাঁত থাকে না। আর দাঁতের সারিতে একটি বড় ফাঁক থাকে। ধারালো কর্তন দাঁত দিয়ে তারা শক্ত আবরণ ভেঙে ফেলে, আর পেষক দাঁত দিয়ে তা গুঁড়ো করে খায়। এদের মাথার খুলি নিয়ে প্রচুর গবেষণা হলেও হাত-পায়ের গঠন, বিশেষত বুড়ো আঙুল নিয়ে কাজ কমই হয়েছে। স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনে বুড়ো আঙুল সাধারণত প্রথমে হারিয়ে যায় বা ছোট হয়। কিন্তু অন্যান্য প্রাণী নিয়ে গবেষণা প্রমাণ করে, জিনিস ধরার ক্ষমতা ও চলাচলে বুড়ো আঙুল গুরুত্বপূর্ণ। বুড়ো আঙুলের অগ্রভাগে থাকা নখ-এর গঠনই এই রোডেন্টদের জীবনযাত্রার মূল চাবিকাঠি। এটি হয় সমতল নখ, নয়তো বাঁকানো ধারালো নখর, আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি অনুপস্থিত। গাছে থাকা বা উঁচুতে চলাচল করা রোডেন্টদের সাধারণত নখ থাকে। গর্তখোঁড়া প্রাণীদের বুড়ো আঙুলে থাকে নখর। কিছু কিছু প্রাণীর বুড়ো আঙুলের নখর মধ্যবর্তী পর্যায়ের। যেমন – লোমহীন, গোলাপী রঙের ভূগর্ভস্থ নেকেড মোল র্যাট যা পূর্ব আফ্রিকার শুষ্ক অঞ্চলে বাস করে । এগুলি ঠিক পুরোপুরি নখ বা নখর নয়। তৃণভোজী ক্যাপিবারা বা গিনিপিগের মতো প্রাণীদের বুড়ো আঙুলই নেই। কারণ তারা খাবার মুখ দিয়ে ধরে। গবেষণায় দেখা গেছে, নখ থেকে নখরে বিবর্তন ঘটেছে একাধিকবার। এটি অভিসারী বিবর্তন (convergent evolution)-এর উদাহরণ।এই প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন বা সম্পর্কহীন প্রজাতি একই ধরনের পরিবেশে বা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে স্বাধীনভাবে একই রকম বৈশিষ্ট্য বা গঠন অর্জন করে। সংগ্রহশালায় শতাধিক রোডেন্ট নমুনা খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা এই প্রথম তাদের বুড়ো আঙুলের বিবর্তনীয় ইতিহাস মানচিত্রে এঁকেছেন। দেখা গেছে, আজকের ৮৫% বাদামী ইঁদুরের প্রজাতির বুড়ো আঙুলে নখ রয়েছে। এর মানে, প্রায় ৩ কোটি বছর আগেকার অভিন্ন পূর্বপুরুষেরও বুড়ো আঙুলে নখ ছিল। সহগবেষক ড. অ্যান্ডারসন ফেইজো বলেছেন, “বাদামের মতো শক্ত খোলসে ঢাকা উচ্চ-শক্তিপূর্ণ খাবার রোডেন্টদের বড় সুবিধা দেয়। বুড়ো আঙুলের নখ তাদের সেই খাবার ধরতে ও খেতে সাহায্য করে। এর ফলে তারা খাদ্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থেকে পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।” প্রধান গবেষক ড. রাফায়েলা মিসাগিয়া বলেন, নখ শুধু খাবার ধরার জন্যই নয়, প্রাণীদের বাসস্থানেরও ইঙ্গিত দেয়। বৃক্ষ নিবাসীদের নখ সমতল। আর গর্তে থাকা প্রাণীদের নখ বাঁকানো ও ধারালো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিলুপ্ত রোডেন্ট-সদৃশ প্রাণী মাল্টিটিউবারকুলেটসদের হাতের হাড়ের নমুনা পাওয়া গেলে বুড়ো আঙুলের বিবর্তন আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে। এই গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রাণীদেহের ক্ষুদ্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিশাল বিবর্তনীয় সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। মানুষের মতোই বাদামী ইঁদুরদেরও ‘বুড়ো আঙুলের নখ’ তাদের পৃথিবীর সবচেয়ে সফল স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সূত্র : Evolution of thumbnails across Rodentia by Rafaela Missagia, Science Evolution (4 Sep 2025
Vol 389, Issue 6764 pp. 1049-1053)