বিষক্রিয়া

বিষক্রিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ নভেম্বর, ২০২৪

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, কানাডার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং বোস্টন শিশু হাসপাতাল যৌথভাবে একটি নতুন গবেষণাপত্রে জানিয়েছে দীর্ঘস্থায়ীভাবে অল্প পরিমাণে সিসার সংস্পর্শে এলে প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদযন্ত্রের রোগ দেখা যেতে পারে এবং শিশুদের মধ্যে বৌদ্ধিক ঘাটতিও লক্ষ করা যেতে পারে। পূর্বে এই পরিমাণ সিসার সংস্পর্শে এলে তা নিরাপদ বলে মনে করা হত কিন্তু বর্তমানে ওই একই পরিমাণ সিসা বিপদজনক বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এই গবেষণা পত্রে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন অল্প পরিমাণে বিষাক্ত সিসা শিশুদের সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া, বৌদ্ধিক সক্ষমতার অভাব, মনোযোগের ঘাটতি, হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা ADHD, সেইসাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদস্পন্দনের পরিবর্তনশীলতার জন্য একটি ঝুঁকির কারণ। গবেষণার ফলাফল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সিসার সংস্পর্শে আসা শিশুদের প্রায় ৭৬.৫ কোটি আইকিউ পয়েন্টের বার্ষিক ক্ষতি ঘটায়। সিসার বিষক্রিয়া, তা সে যত কম পরিমাণেই হোক প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি ঝুঁকির কারণ, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার রোগে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। কলম্বিয়া মেলম্যান স্কুলের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সেসের অধ্যাপক এবং এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সের চেয়ার লিওন হেস বলেন, সিসার সংস্পর্শে আসার ফলে মানুষের যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ বাড়ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় বিগত ৩০ বছরে শিল্পে বিকাশ ঘটছে এমন দেশে করোনারি হৃদরোগের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু, অর্থাৎ প্রায় ৬০ কোটিরও বেশি শিশু — সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত। বাড়ন্ত শিশুদের শরীরে সিসা সহজেই শোষিত হয়। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, শোষিত সিসার প্রায় ৯৫% সংরক্ষিত হয় তাদের কঙ্কালে। মেনোপজ এবং হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে কঙ্কালের মধ্যে সিসা নির্গত হয়, যা রক্তে সিসার ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলে। সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় কিছু ব্যক্তির সিসা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি। ছোটো বাচ্চাদের মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতার ফলে তাদের সিসার বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও জলের মাধ্যমে অথবা যারা বিমানবন্দর বা অন্যান্য স্থানের কাছাকাছি বাস করে যেখানে সিসা দূষণ ঘটে তাদের মধ্যে সিসার বিষক্রিয়া বেশি দেখতে পাওয়া যায়। গবেষকরা সিসা দূষণের উপর কড়া নজরদারি এবং স্ক্রীনিং-এর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সিসার বিষক্রিয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করার সমাধান হল সিসার পরিবেশগত উৎস শনাক্ত করা এবং নির্মূল করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + 10 =