বিষে বিষে বিষময়

বিষে বিষে বিষময়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা এবং ফরএভার কেমিক্যালস হল দূষণের প্রধান দুটি কারণ। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে এই দুটি উপাদান একত্রিত হলে কীভাবে পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হল প্লাস্টিকের ছোটো ছোটো টুকরো যা চওড়ায় প্রায় ৫ মিলিমিটারেরও কম। বড়ো বড়ো প্লাস্টিকের জিনিস থেকে ছিঁড়ে, ভেঙে এই কণা তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ছোটো প্লাস্টিকের কণা বাতাস, জলে বা খাবারে মিশে যায়, পরিবেশে জমা হয়। যদিও বাস্তুতন্ত্র এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর এদের প্রভাবের পরিমাণ নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন তবে গবেষণা বলছে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় এর উপস্থিতি লক্ষ করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি আমাদের শরীরে মুখ, নাক বা বিভিন্ন ছিদ্র যার সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর সংযোগ রয়েছে তার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।
পরিবেশবিদদের কাছে আর একটা উদ্যেগের বিষয় হল ফরএভার কেমিক্যালস। বেশির ভাগ রাসায়নিক যৌগেরই ক্ষয় হয়। অন্য পদার্থে পরিণত হয়ে সেগুলো মাটিতে মিশে যায় বা জলে দ্রবীভূত হয়। কিন্তু এমন অনেক রাসায়নিক যৌগ রয়েছে, যাদের কোনও ক্ষয় হয় না। সময়ের সাথে সাথে সেগুলো অন্য পদার্থে বদলেও যায় না। মানবশরীরে ঢুকলে সেগুলো সেখানেই থেকে যায় বহু বছর, আমৃত্যু। বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ শ্রেণির রাসায়নিক পদার্থের নাম রেখেছেন ‘পারফ্লুরোঅ্যালকাইল অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্সেস’ বা পিএফএএস। এই যৌগ মানুষেরই তৈরি এবং বিভিন্ন পণ্যে এগুলো পাওয়া যায়। কোনও ক্ষয় নেই বলে এদের বলে – ফরএভার কেমিক্যালস। পিএফএএস-এর প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যে। পিএফএএস তার বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচুর উত্পাদন প্রক্রিয়াগুলোতে ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে কিডনির ক্ষতি করে এবং ক্যান্সারের বৃদ্ধি ঘটায়। এই দূষিত রাসায়নিক যেমন বন্যপ্রাণীদের শরীরে পাওয়া গেছে তেমনই পাওয়া গেছে বৃষ্টির জলে।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ড্যাফনিয়া ম্যাগনা নামের একধরনের জলের মাছির উপর মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং পিএফএএস-এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেন এই মাছিগুলোর উপর মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ফরএভার কেমিক্যালসের মিলিত প্রভাব ৪১% বেশি ক্ষতি করে। তাদের বৃদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা, সন্তানসন্ততির সংখ্যা সবই হ্রাস পায়। এই জলের মাছি শুধু জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের একটি মূল অংশ নয় এটি পরিবেশ দূষণের একটি প্রয়োজনীয় সূচক। এই অধ্যয়নের ফলাফল শুধুমাত্র জলজ প্রাণীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, মানুষের জন্যও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাই তারা মনে করছেন পরিবেশে এই দূষিত উপাদানের অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণকে মোকাবেলা করে এমন নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া বা কাঠামো প্রয়োজন, এবং এর সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক মিশ্রণের দীর্ঘস্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।