বুড়ো আঙুল আর বড় মস্তিষ্ক?  

বুড়ো আঙুল আর বড় মস্তিষ্ক?  

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বড় হাত মানেই বড় পা কিংবা মানুষের বুদ্ধি ও হাতের কৌশলগত দক্ষতার মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা আমরা জানি। কিন্তু সম্প্রতি নতুন গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে, শুধু মানুষ নয়, সব প্রাইমেটের ক্ষেত্রেই হাতের লম্বা বুড়ো আঙুলের সঙ্গে বড় মস্তিষ্কের সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর ড. জোয়ানা বেকার ও তাঁর সহকর্মীরা ৯৪টি প্রাইমেট প্রজাতি নিয়ে এই গবেষণা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি প্রাচীন হোমিনিন প্রজাতি থেকে শুরু করে লেমুর পর্যন্ত। তাঁরা প্রতিটি প্রজাতির বুড়ো আঙুলের দৈর্ঘ্য এবং মস্তিষ্কের ভর তুলনা করেছেন। দেখা গিয়েছে, যত দীর্ঘ বুড়ো আঙুল, তত বড় মস্তিষ্ক। এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও। যাদের বুড়ো আঙুল অস্বাভাবিক লম্বা তাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত বড়। সম্পর্কটি ব্যতিক্রম নয়, এই প্রবণতাই প্রাইমেটদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। গবেষকদের মতে, এটি প্রমাণ করে যে হাতের কৌশল ও মস্তিষ্কের বিকাশ একসঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে।
ড. বেকার বিষয়টির যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যখন কোনো প্রাইমেট বেশি বুদ্ধিমান হয়, তখন সে কাজ করার আগে পরিকল্পনা করতে শেখে, হাতের ব্যবহার আরও দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর লম্বা বুড়ো আঙুল থাকলে ক্ষুদ্র বস্তু আরও ভালোভাবে ধরা যায়, ফলে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাজ খুব দ্রুত করা যায়। এই সুবিধা তাদের বেঁচে থাকা ও কাজ করার সফলতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
একটি ব্যতিক্রম অবশ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা নামক প্রাচীন হোমিনিন প্রজাতির বুড়ো আঙুল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লম্বা , কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক সেই অনুপাতে খুব বড় ছিল না।এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারণা, গাছে ওঠা-নামা ও মাটিতে চলাফেরার কারণে হয়তো এই বিশেষ অভিযোজন ঘটেছিল।
আরও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, লম্বা বুড়ো আঙুলের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল মূলত নিওকর্টেক্স নামক মস্তিষ্কের অংশ। এই অংশটিই চিন্তাশক্তি, অনুভূতি এবং কার্যপরিকল্পনা করার সাথে জড়িত। এটি সেরিবেলাম (লঘু মস্তিষ্ক) বা অন্য চলন নিয়ন্ত্রণ অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ ব্যাপারটা গবেষকদের কাছে বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল।
তবে গবেষণা এটিও স্পষ্ট করেছে যে, শুধু বুড়ো আঙুলের দৈর্ঘ্য দেখে কারও হাতের দক্ষতা বা যন্ত্র ব্যবহার করার ক্ষমতা নির্ধারণ করা যায় না। কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার সংশ্লিষ্ট বিবর্তনে আরও অনেক অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য (হাতের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, পেশীর গঠন)
ও স্নায়বিক প্রক্রিয়ার ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়েই তৈরি হয়েছে মানুষের হাতের কৌশলগত নিপুণ দক্ষতা।
অন্য গবেষকরাও বলছেন, মানুষের হাতের বিশেষ দক্ষতা ও মস্তিষ্কের উন্নয়ন পুরোপুরি বুঝতে হলে আরও বিস্তারিত গবেষণা জরুরি। হাড়ের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, জীবদেহের গতি বিশ্লেষণমূলক মডেল এবং মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্নায়বিক প্রক্রিয়ার পরীক্ষা – এগুলিও তার অন্তর্গত।
গবেষণাটি শেষ পর্যন্ত একটা অজানা সত্য তুলে ধরল: মানুষের দীর্ঘ বুড়ো আঙুল এবং বড় মস্তিষ্ক হয়তো আজ আমাদের কাছে স্বতন্ত্র কোনো বৈশিষ্ট্য মনে হতে পারে , কিন্তু আসলে এটি পুরো প্রাইমেট জগতে বিদ্যমান এক বিবর্তন ধারা। হাতের দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা দুটিই একসঙ্গে হাতে হাত রেখে বেড়েছে এবং একে অপরকে সহবিবর্তনে সাহায্য করেছে।
সূত্র: Human dexterity and brains evolved hand in hand by Joanna Baker, et.al ; Communications Biology (26.8.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − two =