বোতাম লাগানো কোলাজেন

বোতাম লাগানো কোলাজেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জুলাই, ২০২৫

আমাদের শরীরের শতকরা বিশ ভাগ প্রোটিনই কোলাজেন নামক এক অদ্ভুত, গিট খাওয়ানো দড়ির মতো জিনিস দিয়ে তৈরি। ত্বক, হাড়, টেন্ডন, তরুণাস্থি এই সবই দাঁড়িয়ে আছে কোলাজেন নামক এই সুতোর উপর ভর করে। এই কোলাজেন এক রহস্য। শরীরের তাপমাত্রায় এই প্রোটিন অবিশ্বাস্যরকম অনিরাপদ, অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সে করে কিভাবে? সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ অধ্যাপক ন্যান্সি ফোর্ড এবং পোস্টডক্টোরাল গবেষক আলা আল-শায়ের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তাঁরা এক অভিনব প্রযুক্তি, Atomic Force Microscopy (AFM) বা পারমাণবিক বল অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে, তাপমাত্রা অনুযায়ী কোলাজেন প্রোটিনের গঠন কেমন বদলায় তা সরাসরি ‘ছুঁয়ে’ দেখেছেন। এএফএম কোনো সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র নয়। আলোহীন জায়গাতেও এক সূক্ষ্ম সূচের সাহায্যে প্রোটিনের পৃষ্ঠদেশে টহল দিয়ে এটি তার আকার অনুভব করে। কিছুটা ব্রেইল পড়ার মতন। এইভাবেই আলা আল-শায়ের শীতল ও গরম অবস্থায় শত শত কোলাজেনের চিত্র তুলে ধরেছেন। কোলাজেন মূলত তিনটি তন্তু জড়ানো এক “ট্রিপল হেলিক্স” বা ত্রিকুন্ডলীয় পাক-খাওয়া কাঠামো। গরমে এই রাশির বাঁধন আলগা হয়ে খসে পড়ে, ঠান্ডায় আবার কিছুটা গুটিয়ে যায়। সব কোলাজেন একইরকম আচরণ করে না। গবেষণায় বেরিয়ে আসে, কোলাজেন ফোর( iv ) নামের এক বিশেষ কোলাজেন ‘সিস্টেইন’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের দুই পাকের মধ্যে রাসায়নিক বোতাম লাগানোর কাজ করে থাকে। যেসব কোলাজেনে এই বোতামঘরের মতন সংযোগ আছে, তারা অনেক বেশি তাপ সহ্য করতে পারে। এমনকি গরমে ছিঁড়ে গেলেও, পরে ঠান্ডা হলে আবার আগের মতো জুড়ে যেতে পারে। যাদের এই বোতাম ঘর নেই, তারা গলে পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে। আল-শায়ের বিভিন্ন প্রজাতির কোলাজেনের প্রোটিন সংক্রান্ত তথ্য ঘেঁটে দেখেন এই সিস্টেইন-বাঁধাই মূলত বহুকোষ-বিশিষ্ট জীবে আছে। এমনকি লক্ষ লক্ষ বছর আগে পাওয়া বিবর্তিত প্রাচীন জীবগুলিতেও আছে। মানে এই রাসায়নিক বোতাম বাঁধাই কতটা প্রয়োজনীয়, সেটা প্রকৃতি নিজেই দেখিয়েছে। অধ্যাপক ফোর্ড বলেন, “আগে গবেষণাগুলিতে ছোট কৃত্রিম ভাবে সংশ্লেষত পেপটাইড ব্যবহার করে হতো। কিন্তু এখন আমরা পুরো কোলাজেনের গঠনকে বুঝতে পারছি এএফএম-এর সাহায্যে।” এখন তাঁর লক্ষ হল রোগে বা বয়সজনিত কারণে রূপান্তরিত জিনগুলি কোলাজেনের গঠন কেমনভাবে বদলায় তা বোঝা। এই গবেষণা ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য দরজা খুলে দিতে পারে। অধ্যাপক ফোর্ড এবং তাঁর টিম কেবল প্রোটিন নিয়েই কাজ করছেন না, দেখছেন ভবিষ্যতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের মানচিত্র। বোতাম লাগানো কোলাজেন সুতোয় বাঁধা শরীরের ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 1 =