মেয়েটির নাম পাউলিন হগার্ড। মেয়েটির আগ্রহ ছিল ফসিলে। সালটা ১৯৪৯। মেয়েটি তখন ১৬বছরের স্কুলছাত্রী। পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলো উত্তর ইংল্যান্ডের হুইটবির পাহাড় ও সমুদ্র ঘেরা এলাকায়। প্রথম কদিন সমুদ্র সৈকতে খোঁজাই সার হলো। পরিবারের লোক ক্লান্ত। মেয়েটিও হতাশ। তবু আর একটু খুঁজতে চায় সে। আর একটু থেকে যেতে চায় এ জায়গায়। সেইমতো অন্য একটি পরিবারের সাথে বোর্ডিংহাউজে থেকে গেল মেয়েটি। এবার সে সমুদ্র লাগোয়া পাহাড়ে খুঁজতে চায় আগ্রহের ফসিল। এরকম আনাড়ি ভাবে যে ফসিল খোঁজা যায় না সেকথা মানতে চাইতো না বালিকা মন। মনে হতো সে জানে কোথায় ঠিক পাওয়া যাবে ফসিল। কিন্তু আনাড়িপনার মাঝেই ঘটে গেল মিরাকল। একদিন সত্যিই একটি পাথরে ফসিল পেল মেয়েটি। তাও আবার খুবই দুর্লভ একটি প্রাণীর- ইচথ্যাওসোর। এটি আসলে প্রায় ২০-২৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়া একটি টিকটিকির মতো মাছ। মোটামুটি ৩ ফুট ৩ইঞ্চি মতো লম্বা হতো। প্রায় ৯ কোটি বছর আগে প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯ শতক থেকে এই আদিম প্রাণীটিকে সরিসৃপ গোত্রের বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ঐ পরিবারেরই সদস্য নিকোলাস সে সময় লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে জানান ব্যাপারটি। লিডসের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে ইচথ্যাওসোরের জীবাশ্ম।
তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সাত দশক। হগার্ডের ভাগ্নি একদিন যোগাযোগ করে দিলেন লিডস মিউজিয়ামের সঙ্গে। দীর্ঘ সাত দশক পরে ৮৮ বছরে বয়োবৃদ্ধ ভদ্রমহিলা ১৬ বছরের পাউলিন হগার্ডের আনাড়িকীর্তি মনে করে যারপরনাই আনন্দিত। বলেন, আমি কোনোদিন ভুলতে পারিনি সেদিনের কথা, ফসিল খুঁজে পাওয়ার গল্প শোনাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত আমি। খুশির হাওয়া লিডস মিউজিয়ামেও। মিউজিয়ামের কিউরেটর কার্ল ব্রাউন বলেন, পাউলিনের নিজের মুখে ফসিল আবিষ্কারের গল্প শোনাটা মুহূর্তটি অত্যন্ত আনন্দের। জীবনের প্রথম লগ্নে স্রেফ উৎসাহের জোরে ঘটে যাওয়া বিষ্ময় কে জীবন সায়াহ্নে ফিরে দেখা উত্তেজকই বটে।