ব্রোঞ্জ যুগের মমিতে চিজের খোঁজ পাওয়া গেল

ব্রোঞ্জ যুগের মমিতে চিজের খোঁজ পাওয়া গেল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ব্রোঞ্জ যুগের মমি

বিজ্ঞানীরা প্রাচীন যুগের তথ্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আসাধারণভাবে উন্মোচন করে চলেছেন। তারা হাজার হাজার বছরের পুরোনো সমাধি থেকে চিজের উৎপত্তি রহস্য বের করে ফেলছেন। প্রায় দুই দশক আগে, উত্তর-পশ্চিম চীনের তারিম বেসিনের জিয়াওহে কবরস্থানে প্রায় ৩৩০০ থেকে ৩৬০০ বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগের সমসাময়িক বেশ কয়েকটা মমি পাওয়া গিয়েছিল। এক দল প্রত্নতাত্ত্বিক এই মমিগুলোর ঘাড়ে মাথায় সাদা পদার্থের প্রলেপ দেখেছিলেন। সেই সময়ে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে এই পদার্থগুলো এক ধরণের ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পণ্য হতে পারে, তবে ঠিক কী ধরনের পণ্য তা শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ বিশ্লেষণে অগ্রগতির পরে, ইনস্টিটিউট অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি এবং প্যালিওনথ্রোপলজির কিয়াওমি ফু এর নেতৃত্বে এক দল গবেষক সাদা পদার্থের রহস্য উন্মোচন করেছেন। গবেষকরা কবরস্থানের তিনটে ভিন্ন সমাধিতে পাওয়া নমুনা থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বের করে, নমুনায় গরু ও ছাগলের ডিএনএ শনাক্ত করেছেন। তারা দেখেছেন, সাদা পদার্থ হল কেফির চিজ। গবেষকরা জানিয়েছেন, এটা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিজের নমুনা। প্রাচীন শাওহি মানুষরা নানা ধরনের পশুর দুধ ব্যবহার করত, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং গ্রীক চিজমেকিংয়ের প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আলাদা। সেল প্রেস জার্নাল সেল-এ প্রকাশিত গবেষণা কেফির চিজের উৎপত্তি সম্পর্কে জানাচ্ছে তার সাথে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তনের উপর আলোকপাত করছে।
ফু ও তার গবেষকরা অণুজীবের ডিএনএ উদ্ধার করে নিশ্চিত হয়েছেন এটা কেফির চিজ। নমুনায় তারা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি দেখেছেন, তার সাথে ল্যাকটোব্যাসিলাস কেফিরানোফেসিয়েন্স এবং পিচিয়া কুদ্রিয়াভজেভি খুঁজে পেয়েছেন যা বর্তমান সময় কেফির চিজে পাওয়া যায়। ল্যাকটোব্যাসিলাস কেফিরানোফেসিয়েন্স-এর নমুনা তিব্বতের কেফিরের সাথে মেশে। বহুদিনের প্রচলিত ধারণা রাশিয়া কেফিরের উৎস, এই আবিষ্কার তা প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। কারণ চিন দেশের মমির নমুনায় পাওয়া চিজ, সবচেয়ে প্রাচীন। এই নমুনায় পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন ও বর্তমান ল্যাক্টোব্যাসিলাস-এর তুলনা করলে দেখা যায়, বর্তমান ব্যাকটেরিয়া মানুষের অন্ত্রে প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে বিশেষ একটা উস্কে দেয়না। অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার সাথে জিন আদানপ্রদানে এটা মানুষের পোষক কোশের সাথে অভিযোজিত হয়েছে। এই গবেষণা যেমন ব্যাকটেরিয়ার বিবর্তন দেখাচ্ছে, তেমন প্রাচীনকালের মানুষের জীবন যাপনের ছবি তুলে ধরছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রযুক্তি নানা প্রাচীন বস্তু আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে।