ব্ল্যাক হোলের জন্মের আলোকচিত্র

ব্ল্যাক হোলের জন্মের আলোকচিত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ জুন, ২০২৫

সম্প্রতি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাভিটেশনাল ফিজিক্স-এর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ও বিস্তারিত নিউট্রন তারকার সংঘর্ষের সিমুলেশন সম্পন্ন করেছেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে দুটি নিউট্রন তারকা সংঘর্ষের পর দ্রুত ব্ল্যাক হোলে রূপ নেয়, শক্তিশালী গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটায় এবং মহাবিশ্বে সোনা প্রভৃতি ভারী মৌল ছড়িয়ে দেয়।
জাপানের বিখ্যাত সুপারকম্পিউটার ফুগাকু-এর সাহায্যে এই সিমুলেশনটি পরিচালিত হয়। এতে ১৩ কোটি সিপিইউ ঘণ্টা সময় লেগেছে এবং একসঙ্গে ৮০ হাজার প্রসেসর কাজ করেছে। গবেষক কোতা হায়াশি জানান, এই সিমুলেশন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো নিউট্রন তারকা সংঘর্ষ এবং ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সংরক্ষণ করেছে। এই গবেষণায় আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, নিউট্রিনো নিঃসরণ এবং শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রথমে ১.২৫ এবং ১.৬৫ সৌর ভরের দুটি নিউট্রন তারা পাঁচবার একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং ধীরে ধীরে একত্রিত হয়। সংঘর্ষের পরে অতিরিক্ত ভর ও ঘনত্বের কারণে অবশিষ্ট বস্তু দ্রুতই ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, নিউট্রিনো প্রবাহ, গামা রশ্মির বিস্ফোরণ এবং কিলোনোভা নামক উজ্জ্বল গ্যাস-মেঘ তৈরি হয়। ২০১৭ সালে নিউট্রন তারকা সংঘর্ষের সময় গবেষকরা কিলোনোভা থেকে সোনা, প্লাটিনাম প্রভৃতি ভারী মৌল শনাক্ত করেন। এই নতুন সিমুলেশন সেই প্রক্রিয়ার আরও গভীর ব্যাখ্যা দেয়।

সংঘর্ষের পর ব্ল্যাক হোলের চারপাশে যে চাকতি সদৃশ অংশ তৈরি হয়, তাতে চৌম্বক ক্ষেত্র আরও শক্তিশালী হয় এবং ব্ল্যাক হোলের ঘূর্ণনের কারণে শক্তি প্রবাহিত হয়ে গামা রশ্মির বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনা মহাবিশ্বের একাধিক সংকেত পাঠানোর অন্যতম উৎস। গবেষকরা মনে করছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যতের মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, নিউট্রিনো ও কিলোনোভা পর্যবেক্ষণে নতুন দিশা খুলে দেবে।

এই উন্নত সিমুলেশন মহাকাশের চরম পর্যায়ের ঘটনা সম্পর্কে আমাদের পূর্বাভাস ও বোঝাপড়াকে আরও নিখুঁত করবে এবং মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনে বড় ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 11 =