ব্ল্যাক হোল এবং এক্স-রশ্মি ঝলক

ব্ল্যাক হোল এবং এক্স-রশ্মি ঝলক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

২০১৯ সালে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কন্যা নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যেকার একটি ব্ল্যাক হোল বহু দশক ধরে নিষ্ক্রিয় থাকবার পর আচমকাই জেগে উঠে অভূতপূর্ব মাত্রায় এক্স-রশ্মির ঝলক ছাড়তে আরম্ভ করেছে। এই উজ্জ্বল আঁটোসাটো সক্রিয় ব্ল্যাক হোলটির নাম সেওয়া হয়েছে ‘অ্যান্‌স্কি’। এ তথ্য জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান সাদার্ন এজেন্সির জার্মানিতে অবস্থিত মানমন্দিরের গবেষক পলা সাঞ্চেজ সায়েজ। তঃপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিলে দেশের ভাল্‌পারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লোরেনা হের্নান্দেজ-গার্সিয়া লক্ষ্য করেন যে প্রায় নিয়মিত সময় পরপর এক্স-রে রশ্মির এই ঝলক বেরোচ্ছে। এই পরিঘটনাটিকে বলা হয় প্রায়-পর্যায়ক্রমিক উদ্‌গিরণ। কেন যে এগুলো ঘটে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
‘এক্স-এম এম নিউটন’ হল একমাত্র এক্স-রশ্মি দূরবীক্ষণ যাতে পটভূমি থেকে আসা একেকটি ঝলকের মাঝের পর্বের ক্ষীণতর এক্স- রশ্মি আলো শনাক্ত করা যায়। এর সাহায্যে অ্যান্‌স্কি কতটা ক্ষীণ হয়ে পড়ে তা মেপে নিয়ে হিসেব করে বার করা গেল জ্বলে উঠে ঝলক দেওয়া শুরু করার জন্য অ্যান্‌স্কি কতটা শক্তি ছাড়ে। খুব কাছে গেলে পদার্থকে অতিরিক্ত কাছে টেনে নেয় ব্ল্যাক হোল, এমনকি টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে। এইভাবে ধরা-পড়া একটি নক্ষত্র-পদার্থ নির্গত হয়ে যে-তপ্ত উজ্জ্বল ঘূর্ণ্যমান চাকতি রূপে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম অ্যাক্রিশন ডিস্ক। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এক্স-রশ্মির বর্তমান ঝলকের মূলে আছে একটি নক্ষত্র কিংবা ছোটো ব্ল্যাক হোল যা সম্ভবত ওই অ্যাক্রিশন চাকতির সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটাচ্ছে। হয়তো নক্ষত্রের ধ্বংসকাণ্ডের সঙ্গে এটি যুক্ত। কিন্তু অ্যান্‌স্কি যে ওইরকম কোনো ধ্বংসকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তার কোনো সক্ষ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
অ্যান্‌স্কি যেভাবে মাঝে মাঝেই ফেটে পড়ছে তা দেখে গবেষকরা অন্যান্য সম্ভাবনার কথা ভাবতে আরম্ভ করেছেন। এমন তো হতে পারে যে এই অ্যাক্রিশন চাকতিটা গড়ে উঠেছে নক্ষত্রের ভাঙন থেকে নয়, পরিপার্শ্ব থেকে গৃহীত গ্যাস থেকে, যে-গ্যাসকে ব্ল্যাক হোল ধরে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে এক্স-রশ্মির এইসব ঝলকগুলোকে আসতে হবে চাকতির ভিতরকার অতি-শক্তিপূর্ণ ধাক্কা থেকে। সে-ধাক্কাটার মূলে হয়তো আছে কোনো ছোটোখাটো জ্যোতিষ্ক-বস্তুর প্ররোচনা যা পরিক্রমারত বস্তুটির মধ্য দিয়ে চলবার কালে তাকে বারবার বিচলিত করছে। এম আই টি-র পিএইচ ডি ছাত্র জোহীন চক্রবর্তী বলেছেন, এ ধরনের যেসমস্ত ঝলকের ঘটনা আগে দেখা গেছে তাদের তুলনায় অ্যান্‌স্কির ঝলকগুলি দশ গুণ প্রলম্বিত আর উজ্জ্বল। আগের যেকোনো উদ্‌গিরণের তুলনায় এর প্রত্যেকটি উদ্‌গিরণে একশো গুণ বেশি শক্তি বেরিয়ে আসছে। প্রায় সাড়ে চারদিন পরপর উদ্‌গিরণগুলো ঘটছে। এত ঘনঘন উদ্‌গিরণ আগে কখনো দেখা যায়নি। এখনকার জানা মডেল দিয়ে এর ব্যাখ্যা পাওয়া দুষ্কর।
এক্স-রশ্মি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এরভান কুইন্টিন জানিয়েছেন, আগে মনে হয়েছিল ছোটো ছোটো জ্যোতিষ্ক-বস্তু বড়ো জ্যোতিষ্ক-বস্তুর কাছে ধরা পড়ে গিয়ে পাক খেতে খেতে ছুটে ধেয়ে আসছে। কিন্তু অ্যন্সকির উদ্‌গিরণগুলো তো অন্য কথা বলছে। মনে হচ্ছে, এত ঘনঘন এইসব ঝলকগুলোর সঙ্গে অভিকর্ষ তরঙ্গর সম্পর্ক রয়েছে। হয়তো সেটা পরের পর্যায়ের গবেষণায় ধরা পড়বে।
সূত্র: European Space Agency. “From boring to bursting: Giant black hole awakens.” ScienceDaily. ScienceDaily, 11 April 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/04/250411105903.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + fifteen =