ভয় পাব, কি পাব না?

ভয় পাব, কি পাব না?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

জীবনে সারাক্ষণই আমরা হয় এটা, নয় ওটা – এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। সেই সময় মস্তিষ্কের মধ্যে ঠিক কী ঘটে? ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা এ বিষয়ে মধ্য-মস্তিষ্কের একটি বিশেষ রহস্যাবৃত অঞ্চলের স্নায়ু প্রক্রিয়াকরণের একটা সাধারণ নীতির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছে। মধ্য-মস্তিষ্কের ওই অঞ্চলটিই আমাদের কেন্দ্রীয় সেরোটোনিন সিস্টেমের (5-HT) উৎস। বোধবুদ্ধি এবং আচরণের বেশ বড়ো একটা পাল্লা জুড়ে সক্রিয় এটি।

“এখানে আমরা একটা রহস্যময় প্রক্রিয়াকরণ – কিংবা কম্পিউটেশন – শনাক্ত করতে পেরেছি। 5-HT নিউরনগুলোর মধ্যেকার সংযোগ এই প্রক্রিয়াকরণকে বা কম্পিউটেশনেক মদত দেয়”। জানিয়েছেন এই গবেষণার যৌথ পরিচালক ডঃ জাঁ-ক্লদ বেয়িক। বিজ্ঞানীরা তড়িৎ-শারীরতত্ত্ব, কোষ-চিত্রগ্রহণ, চক্ষু-জিনতত্ত্ব এবং আচরণবিজ্ঞানের নানান পরিমার্গ (অ্যাপ্রোচ) নিয়ে কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে গাণিতিক মডেল নির্মাণ আর কম্পিউটার সিমুলেশন তো আছেই। দেখা গেছে, মস্তিষ্ককাণ্ডর মধ্যে জটলা পাকিয়ে-থাকা সেরোটোনিন নিউরনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করে না, তারা মস্তিষ্কের বাকি অংশে স্নায়ুতন্তু প্রেরণ করে। অঙ্গসংস্থান আর শারীরতত্ত্ব উভয় বিচারেই স্তন্যপায়ীদের সেরোটোনিন সিস্টেম আগে যা ভাবা গিয়েছিল তা থেকে অনেক জটিল। এই জ্ঞান হয়তো ডিপ্রেশনের মেজাজ-বদলের নির্দিষ্ট চিকিৎসায় কাজে লাগবে। একথা জানিয়েছেন ওই গবেষনার আরেক গবেষক ডঃ মাইকেল লিন।

দেখা যাচ্ছে সেরোটোনিক নিউরনগুলির নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আছে যারা নিজেদের মতো কাজ করে। একেকটি গোষ্ঠী মস্তিষ্কের এককটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের সেরোটোনিন নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। মনে হচ্ছে এইসব সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া করে। “জয়ী” অতিসক্রিয় সেরোটোনিন গোষ্ঠীগুলি কম-সক্রিয় “পরাজয়মুখী” সেরোটোনিন গোষ্ঠীগুলি থেকে সেরোটোনিন নিঃসরণ খুব কমিয়ে দিতে পারে। তার মানে একটা জটিলতর, গতিশীল নিয়ম-সমষ্টি আছে যা মস্তিষ্কের আগাগোড়া কখন আর কীভাবে সেরোটোনিন নিঃসরণ ঘটবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। আগে কিন্তু ধারণা ছিল, একটাই সর্বময় সংকেতের অস্তিত্ব আছে। দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগ্রহণের ব্যাপারে আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা অনুধাবনের ক্ষেত্রে এই গবেষণার অনেক তাৎপর্য। ব্যর্থতাবোধে আচ্ছন্ন হয়ে আমরা যখন হতাশায় আক্রান্ত হই তখন ‘হাবেনুলা’ নামে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে। গুরুতর ডিপ্রেশনের সঙ্গে এটি জড়িত । শেষ পর্যন্ত এটিই সেরোটোনিন নিউরনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। খুব সম্ভব এই হাবেনুলা অঞ্চলের নিউরনগুলোই নির্দিষ্ট কোনো পরিবেশ থেকে আসা বিপদের আশঙ্কার মাত্রাটাকে সাংকেতিক রূপ দেয় – এমনকি হয়তো আমাদের কাজকেও। ডঃ বেয়িক এর উদাহরণ দিয়েছেন। “ জলে ডাইভ মারার সময় ডাইভিং মঞ্চের কোনটি থেকে লাফ মারব? উঁচুটা থেকে না নিচুটা থেকে? সামনের ঘুটঘুটে অন্ধকার গলিটার মধ্যে ঢুকব, নাকি এড়িয়ে যাব? অন্ধকারটা কখন ‘ঘুটঘুটে’ হয়ে ওঠে? আমাদের জগতের নানান বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটা হ্যাঁ-কিংবা-না (বাইনারি) রূপে কম্পিউট করতে হয় আমাদের মস্তিষ্ককে। একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয় – হয় যাব, নাহয় যাব না। মনে হচ্ছে আমরা আমরা এমন একটা বর্তনী শনাক্ত করতে পেরেছি যা আমাদের দৈনন্দিন সিদ্ধান্তগ্রহণকে পরিচালনা করে”।

এবার গবেষকরা ইঁদুরের মডেল বানিয়ে তাদের আচরণগত সমীক্ষা চালাবেন।

সূত্র: University of Ottawa. “Compelling new insights into dynamics of the brain’s serotonin system.” ScienceDaily. ScienceDaily, 25 April 2025. <www.sciencedaily.com/releases/2025/04/250425113347.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =