ভুলে যাওয়া কি বেড়েছে করোনা কালে!

ভুলে যাওয়া কি বেড়েছে করোনা কালে!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ এপ্রিল, ২০২২

ভুলে যাওয়া কি বেড়েছেক করোনা কালে! যাওয়া কি বাড়ছে করোনাকালে? এই প্রশ্ন হঠাৎ কেন? নীচের এই অভিজ্ঞতা ইদানিং আপনার হচ্ছে কি না দেখুন।

হয়তো কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিষয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছেন, কিন্তু তার নাম কিছুতেই মনে আসছে না। অথচ খুব কাছের বন্ধু। আবার কিছুক্ষণ পর নামটা মনে পড়ল। এ রকম ঘটনা অনেকেরই ঘটছে। করোনাকালে বিশেষভাবে গত বছর দুয়েকের মধ্যে যেসব এলাকায় কিছুদিন পরপর একটানা বেশ কিছুকাল বিধিনিষেধ চলেছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনার কথা শোনা যায়। অথবা কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হলেও যাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে নানা রকম অসুস্থতা চলতে থাকে, তাঁদের অনেকের সাময়িক স্মৃতিভ্রম ঘটতে দেখা যায়।
স্মৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ডিমেনশিয়া নয়। বিশেষভাবে করোনাকালে এ ধরনের সাময়িক স্মৃতিসংকট দেখা যাচ্ছে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এ ধরনের স্মৃতিবিভ্রাট বেশি ঘটে। আবার ৪০ থেকে ৫০ বছরের ব্যক্তিরাও এ ধরনের সাময়িক রোগে আক্রান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ম্যাগাজিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনলাইন সংস্করণে ৫ এপ্রিল এলিজাবেথ বার্নস্টেইন এ বিষয়ে লেখেন। সামাজিক মনস্তত্ত্ব বিষয়ে তিনি এ জার্নালের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখাটা শুরু হয়েছে এভাবে: কলেজ সেমিনারে গ্র্যান্ট শিল্ডস আলোচনা করছিলেন। শিক্ষার্থী ২৪ জন। হঠাৎ তাঁর মাথা শূন্য হয়ে যায়। তাঁর সহকারী শিক্ষকের নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। ড. শিল্ডস বলেন, ‘আমি হতভম্ব হয়ে যাই।’ নাম ভুল বলায় শিক্ষার্থীরা হাসছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার স্মৃতি আগের মতোই থাকুক।’ লেখিকার মন্তব্য হলো কয়েক মুহূর্তের জন্য ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাওয়ার এ রকম ঘটনা এই দিনগুলোয় প্রায়ই আরও অনেকের হচ্ছে বলে স্মৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
কেন এ রকম হচ্ছে
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা করোনা অতিমারির কারণে হয়ে থাকতে পারে। বলা যায় সাময়িক একটা ব্যাপার। স্থায়ী কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের টিভি সিএনএনের বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদক ম্যাডেলিন হলকম্ব তাঁদের অনলাইনে গত ৩ ফেব্রুয়ারি লেখেন, এটা মনে রাখার চেষ্টার ব্যর্থতা নয় বা এমন নয় যে আগে যত চৌকস ছিলেন, এখন তেমন আর নেই। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের কগনিটিভ সাইকোলজি অ্যান্ড কগনিটিভ নিউরোলজির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আমির হোমান জাভেদি বলেন, দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী অতিমারির কারণে মস্তিষ্কের পক্ষে স্মৃতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে কারও কারও পক্ষে স্মৃতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে। কগনিটিভ ড্যামেজ বা মনে রাখার ব্যাপারটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, দিনের পর দিন কোনো কাজ নেই, ঘটনা নেই, কোন কাজের পর কোন কাজটি করেছি, সেটা মনে রাখার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নেই। কাজকর্মের মধ্যে থাকলে অনেক সময় বিশেষ ঘটনাগুলো মনে রাখা সহজ হয়। কিন্তু অতিমারির সময় অনেকের ক্ষেত্রে প্রায় নিশ্চল জীবন মস্তিষ্কের স্মৃতিবিভ্রম ঘটাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের রুডি তানজি মনে করেন, অতিমারির মনোদৈহিক ও সামাজিক বিভিন্ন উপাদান স্মৃতি ধারণের ব্যবস্থার ওপর চাপ ফেলতে পারে।
কী করতে হবে
প্রথমে মনে রাখতে হবে এটা সাময়িক। জোর করে মনে রাখার চেষ্টা বৃথা। এতে বরং হতাশা বাড়বে। কারণ, যেটা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা হয়নি, সেটা ফিরিয়ে আনা যাবে কীভাবে? দ্বিতীয়ত, একসঙ্গে একাধিক কাজে মনোনিবেশ না করাই ভালো। বরং একটা বই পড়ি। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। হাসিখুশি থাকি। স্মৃতিবিভ্রাট কোনো স্থায়ী ব্যাপার নয়। এ সময়ে হালকা ব্যায়াম খুব উপকারে আসে। একটু হাঁটি। শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করি। এতে মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ বাড়ে। তা ছাড়া মনোযোগ দিয়ে কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এর ফলে আলোচিত বিষয়গুলো সহজে মনে রাখা যাবে।
কারও কোভিডের সংক্রমণ তীব্রতর হয়ে থাকলে হয়তো মনে হতে পারে মস্তিষ্ক ধোঁয়াচ্ছন্ন (ব্রেইন ফগ) হয়ে পড়েছে। কিন্তু এটা সাধারণত সাময়িক সমস্যা। মস্তিষ্ক নিজেই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। অবশ্য বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসাসেবা নিতে হতে পারে।

(সৌজন্যে প্রথম আলো, বাংলাদেশ)