ভূমধ্যসাগর প্রায় উধাও!

ভূমধ্যসাগর প্রায় উধাও!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

 

প্রায় ৫৫ লাখ বছর আগে, ভূমধ্যসাগরের প্রায় তিন চতুর্থাংশ বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে গিয়েছিল, যা মেসিনিয়ান স্যালিনিটি ক্রাইসিস (MSC) নামে পরিচিত। এক গবেষণায় এই ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষণায় জানানো হয়েছে, এই বাষ্পীভবনের ঘটনা দুটো পর্যায়ে ঘটেছিল। সমুদ্রতটে জমা লবণে ক্লোরিন আইসোটোপ বিশ্লেষণ, সংখ্যাসূচক মডেল ও সিমুলেশন তৈরি করে, গবেষকরা কখন, কোথায়, কীভাবে ভূমধ্যসাগরের ৭০ শতাংশ জল হারিয়ে গিয়েছিল তার চার্ট করেছেন। প্রথম পর্যায়ে ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে জিব্রাল্টার প্রণালীতে ৩৫০০০ বছরের জলপ্রবাহ সীমাবদ্ধ ছিল। ভূমধ্যসাগরের জলে যেহেতু টাটকা জল পৌঁছোচ্ছিল না, তাতে ভূমধ্যসাগরের জলে আরও লবণ জমা হয়ে জলের বাষ্পীভবন ত্বরান্বিত হচ্ছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, পরবর্তী ১০০০০ বছরে, ভূমধ্যসাগর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আর পুরো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ফরাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের আর্থ সিস্টেম বিজ্ঞানী জিওভানি অ্যালোইসির নেতৃত্বে গবেষকরা দেখেছেন যে কিছু এলাকায় জলের স্তর ২.১ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। জলে কমে যাওয়াতে সিসিলি প্রণালীর নীচে পার্বত্য অঞ্চল উন্মুক্ত হয়ে যায়। গবেষকদের মতে ভূমধ্যসাগর দু ভাগে বিভক্ত হয়ে আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে একটা স্থল অঞ্চল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বাষ্পীভবন দ্রুত হারে হওয়াতে, সেখানে সমুদ্রতল সবচেয়ে কমে গিয়েছিল। উভয় পর্যায়েই এখানে বেশিরভাগ জমা লবণ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ বিতর্ক করেছেন কীভাবে MSC এসেছিল আর তখন ভূমধ্যসাগর আটলান্টিক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল কিনা। এই গবেষণা জানায় উভয় চিন্তাধারাই সঠিক, এটা একটা দ্বি-পর্যায়ের প্রক্রিয়া ছিল। গবেষকরা খতিয়ে দেখেন নি কেন ভূমধ্যসাগর বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তবে মিওসিনের শেষ পর্যায়ে ব্যাপক টেকটোনিক কার্যকলাপ দেখা গিয়েছিল। পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূত্বকের ওপর চাপ পড়েছিল আর আশেপাশের অঞ্চলগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। জলবায়ুর প্রভাবে MSC তে জলস্তর হ্রাসের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় জলের ৬৯ শতাংশ আয়তন কমে গিয়েছিল। বৃষ্টিপাতের প্রক্সি ডেটা থেকে গবেষকরা মনে করছেন জলবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন এসেছিল। বর্তমানে, জিব্রাল্টার প্রণালী আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রশস্ত এবং গভীর। গবেষকদের অনুমান আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে এই সংযোগ না থাকলে, ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রতি বছর প্রায় আধা মিটার করে কমে যেত। জ্যানক্লিয়ান বন্যায় ভূমধ্যসাগর জলে ভরে গিয়েছিল আর আটলান্টিকের সাথে এর MSC-র প্রভাব পরিবর্তন হয়েছিল। এই গবেষণা শুধুমাত্র ভূমধ্যসাগর নয়, পৃথিবীর ইতিহাসের এই গঠনমূলক সময়ে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে পরিবর্তনের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রতিফলিত করে। এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 9 =