মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে আগুনের গোলা

মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে আগুনের গোলা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ আগষ্ট, ২০২৩

৭ই জুলাই মধ্যরাতে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া জুড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মেলবোর্ন জুড়ে লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি উজ্জ্বল আলো ধীরে ধীরে আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার খবর জানিয়েছেন। তাদের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে আগুনের গোলা ভেঙ্গে ভেঙে যাচ্ছে, আর এই টুকরোগুলো পালাক্রমে জ্বলছে, মানে বেশ বড়ো একটা বস্তু পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করেছিল। এর সাথে যে শব্দ পাওয়া গেছে তা অস্ট্রেলিয়ান ভাষায় সোনিক বুম হিসাবে পরিচিত। এই শব্দ থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে টুকরোগুলো নিম্ন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল, তা নাহলে তার আওয়াজ মাটি থেকে শোনা যেত না। আরো বোঝা যায়, এই আগুনের গোলা বা ফায়ারবলের অন্তত একটি অংশ কঠিন ছিল। কিছু ভিডিওতে এই ফায়ারবলের আভা থেকে স্পষ্টভাবে এর রং কমলা বলে বোঝা যাচ্ছে। তার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে ওই বস্তুটা মহাকাশীয় পাথরের কোনো টুকরো নয়। বরং এটা মানুষের তৈরি, যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্লাস্টিক বা ধাতু পুড়ে তৈরি হয়েছে। তাদের মতে সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার আকাশে কয়েক টন মহাকাশের বর্জ্য দেখা গেছে। যা মহাকাশচারী মানুষ কক্ষপথে রেখে গেছে আর তা এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেই মহাকাশীয় বর্জ্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করেছে।
আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডোয়েলের প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ফায়ারবলটি নেভিগেশন স্যাটেলাইট গ্লোনাস-কে2 বহনকারী সয়ুজ 2 রকেটের তৃতীয় স্তর হতে পারে। এটি রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা রোসকসমস দ্বারা ৭ ই আগস্ট মস্কোর প্রায় ৮০০ কিলোমিটার উত্তরে প্লেসেটস্ক কসমোড্রোম থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
বেশিরভাগ মহাকাশীয় বর্জ্য পৃথিবীতে আসে না। বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় ৫০০০ কেলভিন প্রচন্ড তাপে প্রায় সমস্ত টুকরো পুড়ে যায়। কিছু শক্ত টুকরো পৃথিবীর মাটিতে অবধি পৌঁছোয়। এই কারণেই বায়ুমণ্ডলে মহাকাশীয় বর্জ্যের পুনঃপ্রবেশ সম্পর্কে বিমানগুলোতে বিশেষ সতর্কতা পাঠানো হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আকাশে এই ফায়ারবলের অর্থাৎ বর্জ্যের পুনরায় প্রবেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ ধ্বংসাবশেষের ট্র্যাকিং সাইট, স্যাটভিউতে কিছুই পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি।
মহাকাশীয় বর্জ্য এত দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করে, এর পুনঃপ্রবেশের গণনায় খুব ছোট একটা ভুলের জন্য এর অবস্থান শত শত কিলোমিটার দূরে প্রদর্শিত হতে পারে। ফলে এই ধরনের সতর্কতাগুলো যতটা সহায়ক হওয়া দরকার তা হতে পারেনা। এই সিস্টেম উন্নত করার জন্য, আমাদের মাটিতে আরও ভাল ট্র্যাকিং স্টেশন এবং মহাকাশীয় বর্জ্য এবং ওপরের বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কী ধরনের মিথষ্ক্রিয়া হতে পারে তা মডেলিং করে আমাদের পূর্বাভাস উন্নত করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =