অ্যারিজোনার রুক্ষ সোনোরান মরুভূমি। তপ্ত বালুর পাহাড়, খসখসে বাতাসের মাঝে রয়েছে সাগুয়ারো ক্যাকটাস। মরুভূমির জীবন্ত স্তম্ভ। এদের আয়ু ১৫০ বছরের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তবে এই ক্যাকটাসগুলি বাতাসের সঙ্গে নাচে, দুলে ওঠে, বাঁক নেয়, আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এক অভিনব গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, সাগুয়ারোরা নিজেদের দেহের কাঠামো এমনভাবে “ঢিলে” করে নেয় যে ঝোড়ো বাতাসও তাদের ভাঙতে পারে না। গবেষক জেফ মুর এবং তাঁর দল সোনোরান মরুভূমির দশটি সাগুয়ারো ক্যাকটাসে সেন্সর বসিয়ে তাদের সূক্ষ্ম দোলন রেকর্ড করেন। গাছগুলোর উচ্চতা ২ ফুট থেকে ২৫ ফুট। তাঁরা দেখেন, প্রতিটি গাছের নিজস্ব রেজোন্যান্স ফ্রিকোয়েন্সি বা স্বাভাবিক দোলনের হার রয়েছে। এই হার ০.৫৫ থেকে ৩.৭ হার্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ, প্রতিটি ক্যাকটাস নিজের মতো করে বাতাসের সঙ্গে নড়ে। কেউ একটু ধীরে, কেউ দ্রুত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, একবার দোলন শুরু হলে তা হঠাৎ থেমে যায় না, খুব ধীরে ধীরে থামে। প্রথমে ধারণা ছিল, গাছের ভিতরের জল সঞ্চয়ের পরিমাণই তাদের নমনীয়তা নির্ধারণ করে। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তাপমাত্রাই এক্ষেত্রে আসল নিয়ামক। বাহ্যিকভাবে সাগুয়ারো ক্যাকটাস দেখতে শক্ত ও ভারী মনে হলেও, আসলে এর গঠন চমৎকারভাবে প্রকৌশলসমৃদ্ধ। এর ভিতরে রয়েছে কাঠের পাঁজরের মতো কাঠামো। আর বাইরের দিকটি নরম ও স্পঞ্জের মতো কোষকলায় মোড়া। দিনের তাপে গাছের ত্বক ও ভেতরের কাঠের ধাচা নরম হয়ে যায়। তখন বাতাস এলে তারা সহজে বাঁক নেয়। রাতে ঠাণ্ডায় আবার কাঠিন্য ফিরে আসে। এই দৈনন্দিন তাপমাত্রার ওঠানামাই সাগুয়ারোদের এক অদ্ভুত বেঁচে থাকার কৌশল দিয়েছে। তারা নিছক “টিকে” নেই, বরং পরিবেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। এভাবে এটি একপ্রকার “ক্যান্টিলিভার বিম”–এর মতো আচরণ করে। ভিতটা শক্ত, উপরে নমনীয়। এই নকশাই গাছকে ঝোড়ো বাতাসে ভেঙে না গিয়ে দুলে ওঠার সুযোগ দেয়। মুরের দল গাছের কম্পন রেকর্ড করতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, সেটি একেবারেই “নিরীহ ”। এ পদ্ধতিতে গাছের কোনো ক্ষতি না করেই তার অন্তর্গঠন বোঝা যায়। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিতে গাছের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন, জলবায়ু চাপের প্রভাব এবং মরু পরিবেশে গাছের অভিযোজন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
এমনকি গবেষকরা মনে করছেন, এই দোলন বিশ্লেষণ থেকে মানুষের তৈরি স্থাপত্যেও নতুন প্রযুক্তি আনা যাবে। বিশেষ করে এমন ভবন বা মিনার, যেগুলোকে ঝড় বা ভূমিকম্প সহ্য করতে হয়। সাগুয়ারো ক্যাকটাস কেবল এক উদ্ভিদ নয়, এ হল পুরো মরুভূমির বাস্তুতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। কাঠঠোকরা, পেঁচা, বাদুড় ও অসংখ্য পোকামাকড়-এর ভিতরে বাসা বাঁধে। এর ফুল ও ফল মরুপ্রাণীদের খাদ্য জোগায়। অতএব, এই গাছের শারীরিক অভিযোজন শুধু তার নিজের বেঁচে থাকার কৌশল নয়। বরং একটি সম্পূর্ণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কাহিনী। প্রকৃতির এই শিক্ষাই আজ জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। যেখানে কঠোরতা নয়, অভিযোজনই জীবন রক্ষা করে।
সূত্র : In situ ambient vibration modal analysis of saguaro cacti (Carnegiea gigantea) by Jeffrey R. Moore; American Journal of Botany First published: 21 October 2025
