
প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে অত্যন্ত যত্নসহকারে সংরক্ষিত ছিল ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের মলিসোনিয়া সিমেট্রিকা নামক সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্মটি। সম্প্রতি এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিস্ময় জাগিয়েছে। যার মস্তিষ্কের গঠন আধুনিক মাকড়সার সঙ্গে অদ্ভুতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার আমাদের জানা মাকড়শা তথা অ্যারাকনিডদের (মাকড়শা,কাঁকড়া , বিছা ইত্যাদি) উদ্ভব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে।
আগে ধারণা ছিল অ্যারাকনিডরা স্থলভূমিতে বসবাস শুরু করার পর বিবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু মলিসোনিয়া সিমেট্রিকার জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে , এদের উৎপত্তি আসলে সমুদ্রেই হয়েছিল। এই প্রাণীটির মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান এর মস্তিষ্ক অনেকটা আধুনিক মাকড়সার মতোই। যা আবার রাজ কাঁকড়ার চেয়ে বেশ আলাদা।
গবেষণাটি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার অধ্যাপক নিকোলাস স্ট্রাউসফেল্ড ও তাঁর দল জীবাশ্মটির মস্তিষ্কের তিনটি অংশ (সবুজ, ম্যাজেন্টা ও নীল) বিশ্লেষণ করেন। তাঁরা দেখেন প্রতিটা অংশ রাজ কাঁকড়ার উল্টো বিন্যাসে সাজানো , একেবারে মাকড়সার মতো।
এছাড়াও,মলিসোনিয়ার দেহে ছিল সামনের দিকে একটি শক্ত আবরণ, এবং পিছনে খণ্ডযুক্ত দেহ যা দেখতে ছিল আদি বিছের মতো। তার সামনের অংশে (প্রোসোমা বা মস্তকবক্ষ) ছিল পাঁচ জোড়া পদযুগলের জন্য বিশেষ গ্যাংলিয়া বা স্নায়ুকেন্দ্র যেগুলো মাকড়সার স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণের মতো । এর পাশাপাশি, এক জোড়া ধারালো দাঁড়া জাতীয় অঙ্গও পাওয়া গেছে, যা মাকড়সার বিষাক্ত দাঁতের সঙ্গে তুলনীয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরণের মস্তিষ্কবিন্যাস স্নায়বিক সংযোগকে সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর করে। এই বিন্যাস অ্যারাকনিডদের দ্রুত চলাফেরা, দক্ষ শিকার এবং জাল বোনার ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত। গবেষকদের মতে, এই মস্তিষ্কের কাঠামোই মাকড়সাদের শিকারে দক্ষতা এবং জটিল গতিবিধির মূল রহস্য।
আরও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মলিসোনিয়াকে আধুনিক অ্যারাকনিডদের পূর্বসূরি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এর বংশধররাই সম্ভবত স্থলজীবনে অভিযোজিত হয়ে মাকড়সা, বিছা, সোনালী মাকড়সা, চাবুকের মতো লেজযুক্ত বিছে প্রভৃতি প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছে।
এই গবেষণাটি শুধু মাকড়সার বিবর্তন নয়, বরং সন্ধিপদ তথা সংযুক্ত পা-ওয়ালা প্রাণীদের বিবর্তনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র : “Cambrian origin of the arachnid brain” by Nicholas J. Strausfeld, David R. Andrew and Frank Hirth; (22.7.2025) Current Biology.