
একটি সাম্প্রতিক স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ও মাঝারি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম মস্তিষ্কের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম মস্তিষ্কের বার্ধক্যের ক্ষেত্রে মোটেই সু-প্রভাব ফেলে না। চীনের হাংঝু নর্মাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ স্কুলের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক চেনজিয়ে শু এবং তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটি অব ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন ও তিয়ানজিন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণাটি করা হয়। গবেষকরা ইউ কে বাও ব্যাঙ্ক থেকে সংগৃহীত ১৬,৯৭২ জন অংশগ্রহণকারীর মস্তিস্কের এম আর আই এবং কায়িক পরিশ্রমের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের শরীর চর্চার তথ্য ৭ দিনের পরিধেয় অ্যাক্সেলোমিটার যন্ত্র কৌশলের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এই সেন্সরভিত্তিক যন্ত্র যা কোনো বস্তুর গতি পরিবর্তন পরিমাপ করতে পারে। আলাদা করে হালকা, মাঝারি, তীব্র এবং মাঝারি-থেকে-তীব্র পরিশ্রমের সময় ও প্রবলতা পরিমাপ করে। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে LightGBM নামক একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে। এটি ১,৪০০-রও বেশি চিত্র -ভিত্তিক নিউরোফেনোটাইপ বিশ্লেষণ করে এই অনুমান করে। এর দ্বারা স্নায়ুতান্ত্রিক গঠন বৈশিষ্ট্য ও আচরণগত প্রকাশ, যা জিনের ও পরিবেশের প্রভাব দ্বারা নির্ধারিত, তা বিশ্লেষণ করা হয়। এর সাহায্যে প্রকৃত বয়স ও মডেল-অনুমানের ভিত্তিতে মস্তিষ্কের বয়সের পার্থক্য গণনা করা হয়েছে। গবেষণায় একটি U-আকৃতির সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, খুব কম বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে এই পার্থক্য বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ মস্তিষ্ক দ্রুত বুড়ো হয়। কিন্তু মাঝারি মাত্রার কায়িক পরিশ্রমে মস্তিষ্কের বয়সের এই পার্থক্য লক্ষনীয় রূপে কমে। এ থেকে মস্তিষ্কের সুরক্ষার ইঙ্গিত মেলে। মস্তিষ্কের বয়সের পার্থক্য হ্রাস শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কাঠামোগত পরিবর্তনের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। নিয়মিত মাঝারি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমকারীদের মস্তিষ্কের কয়েকটি অঞ্চলের সাদা ও ধূসর পদার্থের ভলিউম সংরক্ষিত থাকে। যথা সিঙ্গুলেট কর্টেক্স ( মস্তিষ্কের দুটি গোলার্ধর মাঝখানে, কোরপাস ক্যালোসামের ঠিক উপর দিয়ে বিস্তৃত), কডেট নিউক্লিয়াস (মস্তিষ্কের এই গভীর অঞ্চলটি আমাদের চলাফেরা, চিন্তাভাবনা, শেখা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে) এবং পুটামেন (চলাফেরা, অভ্যাস গঠন এবং প্রনোদনা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ)। এছাড়া, তাদের সাদা পদার্থের জোরালো সংকেত কম থাকে, যা মস্তিষ্কের রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো থাকার সংকেত। এছাড়া, মস্তিষ্কের বয়স পার্থক্য আংশিকভাবে বৌদ্ধিক কাজ (প্রতিক্রিয়া সময়) এবং স্নায়ু রোগ সংক্রান্ত অবস্থা (ডিমেনশিয়া, ডিপ্রেশন) প্রভৃতির উপর শারীরিক পরিশ্রমের প্রভাব মধ্যস্থতা করে। অর্থাৎ, মাঝারি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম বোধবুদ্ধির অবনতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। গবেষকরা ভবিষ্যতে একটি বহুমাত্রিক বুড়িয়ে যাওয়া মডেল তৈরি করতে চান। সেখানে ঘুম, অল্প কায়িক পরিশ্রমের আচরণ, ওমিক্স উপাত্ত (জৈবিক তথ্য) এবং স্নায়ুচিত্র একত্রে বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে কীভাবে জীবনশৈলী সংশোধন করলে মস্তিষ্কের বার্ধক্য এবং স্নায়ুক্ষয় জনিত রোগের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
সূত্র:“Accelerometer-Measured Physical Activity and Neuroimaging-Driven Brain Age” by Han Chen, et.al, Health Data Science(2nd May, 2025)