
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন ক্ষুধা ও তৃপ্তির মধ্যে সর্বদা নাকি এক টানাপোড়েন চলে। তাঁরা জানান যে পেট মস্তিষ্কের সাথে কথা বলে। তবে দুটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে কথোপকথনের মূল চালক হল নতুনভাবে চিহ্নিত দুটি নিউরাল সার্কিট। এক পক্ষ খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ায় এবং অন্যটি খাওয়া বন্ধ করার সংকেত দেয়। এই গবেষণা ভবিষ্যতে ওজন নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের উন্নতিতে বড়ো ভূমিকা রাখতে পারে।এই নিউরাল সার্কিট দুটির উপর দুটি গবেষণা হয়।
প্রথমটিতে রবার্ট উড জনসন মেডিক্যাল স্কুলের জিপিং পাং এর নেতৃত্বে গবেষকরা এমন এক স্নায়ুপথ চিহ্নিত করেন যা হাইপোথ্যালামাস থেকে ব্রেনস্টেম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পথের কোষগুলোতে GLP-1 গ্রাহী বা রিসেপ্টর থাকে। এ টি ওজেম্পিকের মতো ওজনহ্রাসকারী ওষুধকে অনুকরণ করে। এই স্নায়বিক পথে আলোর প্রভাব অনুভূত হলে ইঁদুরেরা খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই পথ থেকে গ্রাহককে সরিয়ে নিলে ইঁদুরেরা আবার অতিরিক্ত খাবার খায় এবং ওজন বাড়ায়। উপবাসের সময় এই সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে তবে GLP-1 দিলে পুনরুদ্ধার হয়।
দ্বিতীয় গবেষণায় মার্ক রসি এমন একটি স্নায়ুপথ খুঁজে পান যা ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে। স্ট্রিয়া টার্মিনালিসের নিস্তেজনা মূলক ল্যাটেরাল হাইপোথ্যালামাসের কোষে সংকেত পাঠায়। এই পথ সক্রিয় করলে ইঁদুরেরা হঠাৎ করেই খাদ্যের দিকে ছুটে যায়, আর বন্ধ করলে খিদে থাকা সত্ত্বেও চুপচাপ থাকে। ঘ্রেলিন নামক হরমোন এই পথকে সক্রিয় করে, আর লেপটিন তা বন্ধ করে দেয়।
দুই গবেষণাই দেখিয়েছে, দৈহিক শক্তি এই স্নায়ুকোষগুলিকে দ্রুত পুনঃসংযুক্ত করে। উপবাসে ক্ষুধার অনুভূতি সক্রিয় হয়, আর খাওয়ার পর তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং তৃপ্তি অনুভব হয়।
এই নতুন পথনির্দেশী গবেষণা ব্যাখ্যা করে কেন একতরফা ওজন-নিয়ন্ত্রণে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। উন্নততর ওষুধ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে এই জিএলপি -1 ।
ওয়েগোভি এবং জেপবাউন্ডের মতো জিএলপি -১ -এর নকলগুলি দ্বিগুণ ওজন হ্রাসকে প্রাধান্য দেয়, তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে পেশীর অপচয়ও হতে পারে। প্যাংয়ের তথ্য এই কথা বলে যে কেবলমাত্র ব্রেনস্টেম সার্কিটকে নিশানা করে একটি থেরাপি এবং পেরিফেরিয়াল অঙ্গগুলি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই খাওয়া রোধ করতে পারে। বিপরীতে, রসির কাজ ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক ঘ্রেলিন হরমোন প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া পুনরুদ্ধার করে কয়েক মাস ক্যালোরি কমার পরে খাদ্যাভাসে প্রভাব ফেলতে পারে। ওষুধ যদি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে প্রভাব ফেলে, তাহলে খাওয়া কমানো যাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। রসি বলেন, “হালকা ব্যায়াম করা আর একেবারে বন্ধ করার মধ্যে পার্থক্য আছে।“ তাই ভবিষ্যতের ওষুধ হয়তো সারাদিন খিদে কমিয়ে না রেখে, মস্তিষ্ককে নিজে থেকেই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এটিই হয়তো আগামী দিনের ওজন নিয়ন্ত্রণের সফল চাবিকাঠি।