
জ্যোতির্বিদরা একটি নবীন তারা (ভি৮৮৩ ওরায়নিস) শনাক্ত করেছেন। এটি কেবল আলো ছড়াচ্ছে না , চারপাশের গ্যাস ও ধূলির চাকতিতে লুকিয়ে থাকা প্রাণের সম্ভাব্য উপাদানও প্রকাশ করছে। চিলির আটাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত অ্যালমা টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির বিজ্ঞানীরা এই তারার চারপাশে ১৭টি জটিল জৈব অণু শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইথিলিন গ্লাইকোল এবং গ্লাইকোলোনাইট্রাইল। দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ হচ্ছিল, এই দুটি অণু এই ধরনের পরিবেশে থাকতে পারে। কিন্তু এর আগে কখনো শনাক্ত করা যায়নি।
এই তারাটি বিকাশের এক শক্তিশালী পর্যায়ে রয়েছে, তাই বিপুল পরিমাণ গ্যাস গ্রহণ করছে এবং তীব্র বিকিরণ ছড়াচ্ছে। এর ফলে চারপাশের বরফ ও ধূলিকণার চাকতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সেখানে লুকিয়ে থাকা জৈব অণুগুলো মুক্ত হয়ে যায়। অ্যালমা টেলিস্কোপ এসব অণুর রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করেছে, কারণ অণুগুলো রেডিও কম্পাঙ্ক বিকিরণ করে। আবিষ্কৃত এই অণুগুলির মধ্যে অনেকে অ্যামিনো অ্যাসিড (যেমন -গ্লাইসিন, অ্যালানিন) এবং ডিএনএ-র গঠন উপাদান অ্যাডেনিন তৈরির পূর্ববর্তী ধাপ হিসেবে কাজ করতে পারে। সুতরাং এটা ধারণা করা যায় যে এমন অণুরা কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সৌরজগতে নয়, মহাবিশ্ব জুড়েই ছড়িয়ে থাকতে পারে।
পূর্বে অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা ছিল,নক্ষত্র গঠনের সময়কার উত্তাপ ও বিকিরণ জৈব অণুগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এই আবিষ্কার সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এই জটিল অণুগুলি হয়তো তারকা গঠনের আগেই তৈরি হয়েছিল এবং তার পরবর্তী পর্যায়েও টিকে থাকতে পেরেছিল।
আরও জানা যায় মহাকাশে ধূলিকণা ও বরফকণা হচ্ছে প্রাণসৃষ্টির রাসায়নিক ল্যাবরেটরি। তারা যখন উত্তপ্ত হয়, তখন বরফের মধ্যে থাকা অণুগুলি মুক্ত হয়ে যায় – ঠিক যেমন আমাদের সৌরজগতের ধূমকেতুগুলি সূর্যের কাছাকাছি এলে করে।
শেষ পর্যন্ত, এই গবেষণা আমাদের এক বড় প্রশ্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: মহাবিশ্ব কি প্রাকৃতিকভাবেই প্রাণের রাসায়নিক কাঠামোর জন্য প্রস্তুত? গবেষকরা মনে করছেন, আরও উন্নত ডেটা (উপাত্ত) ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও জটিল অণুর খোঁজ পাওয়া সম্ভব। তবে একথা নিশ্চিতরূপে বলা যায় জীবন গঠনের উপাদানসমূহ মহাবিশ্বের বহু কোণেই লুকিয়ে আছে।
সূত্র: Deep Search for Ethylene Glycol and Glycolonitrile in the V883 Ori Protoplanetary Disk by Abubakar M. A. Fadu, et.al ; The Astrophysical Journal Letters (24 July, 2025).