মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ

মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুন, ২০২৫

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রাজিলের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকাগুলিতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। মাইক্রো প্লাস্টিক হল অত্যন্ত ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা যার আকার সাধারণত ৫ মিলিমিটারেরও কম হয় এবং যাৱা খুব সহজেই পরিবেশে মিশে জলজ প্রানী ও মানুষের ক্ষতি করে। গবেষকরা দশটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত অঞ্চলে পরীক্ষা করেছেন, যেখানে কোনো মানবিক কর্মকাণ্ডের অনুমতি নেই। তারা ঝিনুকের মতো বাইভ্যালভ মোলাস্কা ব্যবহার করে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করেছেন, কারণ এই প্রাণীগুলি তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ জমা রাখতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে হাওয়া ও সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে দূষণ এমন স্থানেও পৌঁছাতে পারে যেখানে কোনও অর্থনৈতিক বা পর্যটন কার্যক্রম নেই।এই অনুসন্ধানগুলি উদ্বেগজনক কারণ তারা নিশ্চিত করে যে দূষণ এমনকি এমন অঞ্চলেও অনুপ্রবেশ করতে পারে যা মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত। প্লাস্টিক কণা সীমানা মানে না, তারা বায়ু এবং সমুদ্রের স্রোতে অবাধে ভ্রমণ করে, বিশাল দূরত্ব জুড়ে তাদের প্রভাব ছড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে বেশি দূষণ অ্যালকাট্রাজেস আর্চিপেলাগো ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজে পাওয়া গেছে, যেখানে প্রতি গ্রাম টিস্যুতে ০.৯০ ± ০.৫৯ কণা ছিল। অন্যদিকে আতোল দাস রোকাস জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণাগারে সর্বনিম্ন দূষণ ছিল, যেখানে ০.২৩ কণা প্রতি গ্রামে পাওয়া গেছে।

প্লাস্টিকের কণাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল আলকিড পলিমার (২৮.১%)। এটি একধরনের কৃত্রিম resin, পলিহাইড্রিক অ্যালকোহল এবং পলিবেসিক অ্যাসিডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয়। এটি মূলত রং ও বার্নিশে ব্যবহৃত হয় এবং সামুদ্রিক সরঞ্জাম থেকে আসতে পারে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপাদানের মধ্যে ছিল সেলুলোজ (২১%), যা প্রাকৃতিক উৎস (শৈবাল ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ) এবং মানবসৃষ্ট কাগজজাত দ্রব্য থেকে আসতে পারে। পলিথিন টেরেফথালেট (PET) ১৪% ছিল, যা সিন্থেটিক কাপড় ও প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও টেফলন (PTFE) ছিল ১২.৩%, যা অ-আঠালো ও শিল্পজাত আবরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সান্তোস এবং রিও ডি জেনিরোর কিছু সমুদ্র ব্যাপকভাবে দূষিত এলাকাগুলোর থেকেও ৫০ থেকে ৬০ গুণ বেশি দূষিত। প্রকৃতপক্ষে, সান্তোসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব রয়েছে। অনুসন্ধানগুলি প্রমাণ করে যে দূষণ এখন সত্যই একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে স্থানীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। বাইভ্যালভদের দূষণ পরীক্ষার মাধ্যমে তারা দেখেছেন যে দূষণ সময়ের সাথে বাড়ছে। গবেষকরা মনে করেন যে দূষণ কমানোর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, যার মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই গবেষণার ফলাফল সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা রক্ষার জন্য নতুন কৌশল তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যাতে স্থানীয় ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পারস্পরিকতায় দূষণ রোধ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 1 =