মাছ ফেলে দুর্গা ছাতু!

মাছ ফেলে দুর্গা ছাতু!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

‘আশ্বিনা-টানের দিনে, পরব ছাতুর পার্বণী/ আইসবে জামাই রাঁত্যে, কাড়ান ছাতু দিব উঁয়ার পাতে’।
মাটির গান। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, জঙ্গলে আশ্বিনের বৃষ্টিধোয়া মাটির গান। মাটি থেকে কাড়ান ছাতুর মাশরুম তোলার সময় বা পরে হয়ত এই গান ঘরে ঘরে চলতে থাকে। জঙ্গলমহলে এই ছাতুকে বলে কাড়াং ছাতু। ওড়িশা-ঝাড়খন্ডের সীমান্তেও এই ছাতু অসম্ভব জনপ্রিয়। চাষ করা মাশরুমের চেয়ে প্রাকৃতিক মাশরুম অনেক বেশি সুস্বাদু। সেটাই হয়ত কারণ, এই কাড়ান ছাতুর স্বাদ ভীষণই সুস্বাদু। এই ছাতুর মাশরুম জন্মানোর সময়টা বড় সুন্দর। বর্ষার শেষে, ঠিক পুজো আসার আগে। সেই কারণেই বাংলার ঘরে ঘরে এই ছাতুর নাম রাখা হয়েছে মা দুর্গার নামে! দুর্গা ছাতু বা পরব ছাতু। ওই সময় দুর্গা ছাতুর মাশরুম কেনার জন্য হাটেবাজারে সোরগোল পড়ে যায়।
তবে, ছত্রাকটা যারা তুলতে যান জঙ্গলে তাঁরা কিন্তু হাতে বিপদ নিয়েই যান। ভোরের আলো ফোটার আগে অন্ধকার থাকতে তাঁরা জঙ্গলে চলে যান। সাপ, বিষাক্ত পোকা, এমনকী হাতির ভয়ও থাকে। এক ঘন্টায় এক একজন দেড় থেকে দু’কেজি ছাতু সংগ্রহ করেন তাঁরা। বিক্রি করতে পারলে পুরোটাই লাভ। কেউ বিক্রি করেন সরাসরি হাটে, কেউ আবার ফড়ে বা পাইকারদের কাছে। কুঁড়ি অবস্থায় বিক্রি করলে কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আর ফোটা ছাতু বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
কীভাবে সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত হয় এই ছত্রাক? কড়াইতে তেল গরম হলে নুন, হলুদ দিয়ে প্রথমে মাশরুমটাকে ভেজে নিতে হবে। এবার পোস্ত, টম্যাটো, লংকা, রসুন দিয়ে মাশরুমটা ভাজা হলে তাতে আলু, পেঁয়াজ দিতে হবে। আলু আর পেঁয়াজ ভাজা হলে তাতে পোস্ত বাটা আর নুন দিতে হবে। কষা হয়ে গেলে জল দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে মাখা মাখা অবস্থায় নামাতে হবে। মাংসের মতো স্বাদ হয় প্রোটিনে সমৃদ্ধ এই দুর্গা ছাতুর যদি ঠিকভাবে রান্না করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + sixteen =