মাথাখেকো অ্যামিবায় মৃত্যুহার প্রায় ১০০ শতাংশ

মাথাখেকো অ্যামিবায় মৃত্যুহার প্রায় ১০০ শতাংশ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ আগষ্ট, ২০২৪
অ্যামিবা

বছর দশেক আগে স্যান অ্যানটোনিওতে ৮ বছরের ছোটো একটা ছেলে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, আলো সহ্য করতে পারছেনা এরকম অবস্থায় ভর্তি হয়। বাচ্চাটাকে ভেন্টিলেটরে রেখে ডঃ ডেনিস কনরাড পরীক্ষা করে তার সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামে ব্রেন ইটিং অ্যামিবার হদিশ পান। এর আগে ডাক্তারের দুজন রোগী এই পরজীবীতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। ডাক্তার কনরাড, মিল্টেফোসিন নামে এক নতুন ওষুধ যা পরীক্ষামূলক স্তরে ছিল তা এই বাচ্চাটির ওষুধের অর্ন্তগত করেন। বাচ্চাটি বেঁচে যায়, কিন্তু বহুদিন তার শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা থাকে। পরবর্তীতেও তাকে তার বাড়ির লোকের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হত। বাচ্চাটি তার মায়ের সঙ্গে একটা ক্যাম্পে থাকত, যার সামনেই একটা নদী ছিল। অন্যান্যদের মতো বাচ্চাটিও প্রতিদিন সেখানে জল ছিটিয়ে স্নান করত, আর এখান থেকেই তার শরীরে এই পরজীবী প্রবেশ করে।
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি মিষ্টি জলে বাস করে, পুকুরে, হ্রদে, নদীতে এরা থাকে। জল ছিটিয়ে, ডাইভ মেরে স্নান করার সময় নাক দিয়ে জল ঢুকে গেলে এগুলো সরাসরি মস্তিষ্কে চলে যায়। বাচ্চাদের বা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এই পরজীবীর প্রকোপ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। এগুলো কলের জলে বিশেষ পাওয়া যায়না, তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে পাত্রে জল নিয়ে নাক পরিষ্কার করার সময় এই পরজীবী মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছে। পরজীবির হানায় মস্তিষ্কের টিস্যু ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়, একে প্রাইমারি অ্যামেবিক মেনিঞ্জোসেফালাইটিস (পিএএম) বলা হয়ে থাকে। এই অ্যামিবা নিজেই কিছু কোশ ধ্বংস করে, তবে মস্তিষ্কের বেশিরভাগ ক্ষতি আসলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ঘটে। অনুপ্রবেশকারী পরজীবীকে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা আক্রমণ করে, তাতে শরীরের কোশ ধ্বংস হতে থাকে।
মিল্টেফোসিন উন্নয়নশীল দেশে পাওয়া যায় না, তাছাড়া লিভার ও কিডনিতে এর ক্ষতিকারক প্রভাব থাকে। তাই এর বিকল্প খোঁজার জন্য গবেষকরা ইউরোপে মূত্রনালীর সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক নাইট্রোক্সোলিনের কথা অ্যান্টিবায়োটিক জার্নালে রিপোর্ট করেছেন, এটা ল্যাবে নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি-কে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। প্রাণীর ওপর এই ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা চলছে, যার ফলাফল সামনের বছর প্রকাশিত হবে। ভিয়েনার মেডিক্যাল ইউনি ভার্সিটির অধ্যাপক জুলিয়া ওয়ালোচনিক বলেছেন, পিএএম হওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানোর সময় খুব কম থাকে। বেশি দেরি হল; রোগী সাধারণত বাঁচে না। এই রোগের ক্ষেত্রে একমাত্র আশা হল রোগটাকে দ্রুত শনাক্ত করা।