
মসৃণ ত্বকের প্রতিশ্রুতি থেকে শুরু করে একফোঁটা আভিজাত্য সিঞ্চিত সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য, যেমন লোশন বা সুগন্ধি, আমাদের নিত্যদিনের পরিপাটির সঙ্গী। অথচ অজান্তেই আমরা বদলে ফেলছি আমাদের চারপাশের বাতাসের রসায়ন। এই সুগন্ধির কুয়াশা এক অদৃশ্য ‘অক্সিডেশন ফিল্ড’ বা জারণ ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিপদের আহ্বান। ২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করেন। আমাদের ত্বক কেবল অনুভূতিক্ষেত্র নয় বরং একটি অদৃশ্য রসায়নগার। ত্বকের প্রাকৃতিক তেল বিশেষ করে স্কুয়ালিন, বাতাসের ওজোন স্তরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে তৈরি করে ‘হাইড্রোক্সিল র্যাডিক্যাল’। এই ক্ষণস্থায়ী অণুগুলি, গ্যাস ভেঙে বাতাসকে শুদ্ধ বা দূষিত করে এবং তৈরি করে এক ধরনের রাসায়নিক বলয়। তারই নাম Human Oxidation Field বা মানব জারণ ক্ষেত্র। এটা কিছুটা এমন যে আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন, আর আপনার চারপাশে এক অদৃশ্য রাসায়নিক ঢেউ খেলে যাচ্ছে, যা আপনার অস্তিত্বের মতোই স্বতন্ত্র। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মানাবু শিরাইওয়া জানাচ্ছেন, “যখন আমরা সুগন্ধি বা লোশন ব্যবহার করি, তখন অজান্তেই এই অক্সিডেশন ফিল্ডকে প্রায় ৮৬% দুর্বল করে ফেলি”। সিমুলেশন যুক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সুগন্ধি ব্যবহারের ৯০ সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষের চারপাশে হাইড্রোক্সিল র্যাডিক্যাল কমে যাচ্ছে! বিভোর করা সুগন্ধি যেমন আমাদের ‘সতেজ’ অনুভব করাচ্ছে, তেমনই বাতাসে নিক্ষেপ করছে এক অলক্ষ্য রাসায়নিক বিপ্লব। এই পণ্যগুলোর কাজ এখানেই থামে না। সুগন্ধি ও লোশনের রাসায়নিক উপাদান ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে শরীরের ভিতরকার যাবতীয় দরকারি জীবাণুদের উপরেও প্রভাব ফেলে। তার মানে বাইরের সৌন্দর্য, ত্বকের গভীরে রাসায়নিক পরিবর্তনের সূচনা করে,যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও গবেষণাধীন। তাই সুগন্ধি ব্যবহারের আগে একটু ভাববেন- নিজেকে সতেজ রাখতে পরিবেশকে নিস্তেজ করে দিচ্ছেন না তো !