
প্রাক এবং আদি মানুষের মেনুতে মাংস ছিল না। এর প্রমাণ মিলেছে। তবে, কবে বা কখন তাদের খাদ্যতালিকায় মাংস এলো, পুষ্টির উৎস হিসাবে মাংসের ব্যবহার কিভাবে বাড়লো তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ মেলেনি। ‘মাংস খেতে শুরু করা’, মানব বিবর্তনের একটি বড় সিদ্ধান্তমূলক মুহূর্ত। এখান থেকেই তাদের প্রচুর দৈহিক শক্তি বাড়তে থাকে, মস্তিষ্ক বড় হয় এবং যাপনের খুঁটিনাটি সরঞ্জাম শেখা শুরু হয়।জোহানেসবার্গের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম ক্ষেত্র ‘স্টারকফন্টেইন’ গুহা থেকে সাতটি প্রাক-মানবের (অস্ট্রালোপিথেকাসের) দাঁতের এনামেলের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে । শুধু প্রাক-মানব নয়, একই সময়ে এবং একই স্থানে বসবাসকারী প্রাণীদের দাঁতের নমুনার সাথেও সেগুলি তুলনা করা হয়েছে । এই প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে, তৃণভোজী বানর, হরিণ এবং মাংসাশী হায়েনা, শেয়াল এবং বাঁকা তরোয়ালের মতো দাঁতযুক্ত বড় বিড়াল। গবেষণাটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কেমিস্ট্রি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটার্সরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মেইনজ-এর গবেষকরা মিলে গবেষণাটি করেছেন। “লিটল ফুট” এর পাশে টিনা লুড স্টারকফন্টেইন গুহায় একটি অস্ট্রালোপিথেকাসের অসাধারণ সংরক্ষিত কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে সম্পূর্ণ প্রাক-মানব কঙ্কাল হিসেবে বিবেচিত। টিনা লুড এবং তাঁর সহকর্মীরা বিশেষ উপায়ে, লক্ষ লক্ষ বছরের পুরনো চুল, নখ, হাড়, বিশেষ করে দাঁতের এনামেলে নাইট্রোজেন আইসোটোপ ব্যবহার করে এর মধ্য দিয়ে প্রাণী-খাদ্যাভাস পুনর্গঠন করে দেখেন । অস্ট্রালোপিথেকাসরা বেশিরভাগই মাংসের পরিবর্তে ফল এবং শাকসবজি খেত এবং কখনও কখনও ডিম মাছ খেত। এটি পরবর্তী কালের মানুষের থেকে ভিন্ন। যেমন, নিয়ান্ডারথাল, যারা খাবারের জন্য বড় প্রাণী এমনকি তিমিও শিকার করত। তাই বিজ্ঞানীরা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, আদি মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্য বৈচিত্র্য থাকলেও তা ছিল একচেটিয়াভাবে, উদ্ভিদ-নির্ভর। খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় , শরীরে বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। বর্জ্যের নাইট্রোজেন যৌগ, প্রস্রাব, মল বা ঘামের মাধ্যমে বের হয়। এক্ষেত্রে দু ধরনের নাইট্রোজেন লক্ষ্য করা যায়। “ভারী” নাইট্রোজেন (15N) এবং “হালকা” নাইট্রোজেন (14N)। তৃণভোজীদের নাইট্রোজেন আইসোটোপ তাদের ‘তৃণভোজের’ তুলনায় অনুপাতে বেশি থাকে। আবার তৃণভোজীদের শিকার করা মাংসাশীদের নাইট্রোজেন আইসোটোপের অনুপাত আরও বেশি হয়। ভারী আইসোটোপ 15N এর থেকে হালকা আইসোটোপ 14N নাইট্রোজেনের অনুপাত যত বেশি হবে, খাদ্য শৃঙ্খলে জীবের অবস্থান তত বেশি হবে- এমনটাই বলা হয়।
“এই গবেষণার মধ্য দিয়ে, নতুন পদ্ধতিতে মানব বিবর্তনের অন্যান্য মূল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়েছে,” গবেষক আলফ্রেডো মার্টিনেজ-গার্সিয়া আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছেন। তাঁরা পরবর্তীকালে পূর্ব আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হোমিনিন
ক্ষেত্রগুলিতে গবেষণা চালিয়ে যাবেন।