
একথা আমাদের জানা যে মানসিক চাপ ঘুমকে আর স্মৃতি ঘটিত প্রক্রিয়াগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। স্মৃতিকে গুছিয়ে তোলার কাজ এর ফলে ব্যাহত হয়, কারণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে স্মৃতিপ্রক্রিয়াতেও ব্যাঘাত ঘটে। আজকের দুনিয়ায় অসংখ্য মানুষ এর শিকার। অথচ মানসিক চাপ নিয়ে ঘুমোলে এবং তার ফলে স্মৃতিপ্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের অন্তর্লীন স্নায়ু-বর্তনীগুলোতে ঠিক কী হয় তা আজও পরিষ্কার নয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করবার জন্য আমেরিকার কয়েকটি গবেষণা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে চলেছে গবেষণা। তার মধ্যে আছে প্রসিদ্ধ নাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ, আলফ্রেড পি স্লোন ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংস্থা। আলিসা উইয়েস্ট, জন জে মাউরের, ফ্রানজ ওয়েবার আর শিনজাই চুং গবেষণাটি করেছেন। জার্নাল অব নিউরোসায়েন্স-এ ৯ জুন ২০২৫ এঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
কী জানা যাচ্ছে এ গবেষণা থেকে? মস্তিষ্কের নিম্নভাগে আছে হাইপোথ্যালামাস। হরমোন নিঃসরণ, স্বয়ংচালিত স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ, শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া সম্পন্ন করে এই হাইপোথ্যালামাস। এর মধ্যে আবার থাকে প্যারা-ভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াস, যা নানান শারীরতাত্ত্বিক ও আচরণগত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে চাপের পীড়নে সাড়া দেওয়া, হরমোন নিঃসরণ প্রভৃতি। এ যেন এক অতিব্যস্ত কর্মকেন্দ্র যা তথ্যাদিকে সুসংহত রূপ দেয়, এবং বাইরের ও ভেতরের উদ্দীপনায় জেগে-ওঠা সাড়াগুলিকে সমন্বিত করে। এই প্যারা-ভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াসের মধ্যে কতকগুলি নিউরনের কাজ হল কর্টিকোট্রপিন নামক হরমোন নিঃসরণ করা। এই হরমোনটিই ঘুম কমিয়ে দেয়, স্মৃতিপ্রক্রিয়ার হানি করে। গবেষকরা একটি পরীক্ষা করেন পুরুষ ইঁদুরদের নিয়ে। দেখা গেল, ওই কর্টিকোট্রপিন হরমোনের প্রভাবে তারা স্থান-পরিসরে রাখা বস্তু শনাক্ত করার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হল। অপরদিকে দেখা গেল, ওই কর্টিকোট্রপিন হরমোন নিঃসরণকারী নিউরনগুলিকে যদি নিস্তেজ করে দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু চাপ-পীড়িত স্মৃতি-ঘাটতি কমে, ঘুমও অল্প বাড়ে। দেখা গেছে, চাপ-পীড়িত দশা আর ওই নিউরনগুলির উদ্দীপনাই হাইপোথ্যালামাসের পার্শ্বীয় অঞ্চলের নিউরনগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। কারণ হাইপোথ্যালামাসের পার্শ্বীয় অঞ্চলের মধ্যেই কর্টিকোট্রপিন নিঃসরণকারী নিউরনগুলি গিয়ে পড়ে এবং চাপ-প্রভাবিত স্মৃতি-ঘাটতি আর ঘুমের ব্যাঘাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ওই হরমোন নিঃসরণকারী নিউরনগুলি যে-নালিপথ ধরে হাইপোথ্যালামাসের বিশেষ অঞ্চলটিতে গিয়ে পড়ে, সেটিই চাপ-জনিত স্মৃতি-ঘাটতি আর ঘুমের ব্যাঘাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ সেই নালিপথটিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে চাপ-পীড়িত দশায় ঘুমের আর বোধবুদ্ধির ঘাটতির কিছুটা উপশম করা যাবে। চাপ-পীড়িত দশায় ঘুমের আর বোধবুদ্ধির ঘাটতির উপশমের লক্ষ্যে এ-আবিষ্কার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সূত্র : Journal of Neuroscience 9 June 2025, e2146242025; https://doi.org/10.1523/JNEUROSCI.2146-24.2025