মানুষের ক্রিয়াকলাপের হাত থেকে রেহাই নেই নদীরও

মানুষের ক্রিয়াকলাপের হাত থেকে রেহাই নেই নদীরও

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জুন, ২০২৪

একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, কৃষি এবং নগরায়ন সারা বিশ্বে নদী ও ঝরনায় উদ্ভিদের আবর্জনা ভাঙার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করছে। ফলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং খাদ্য শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করছে। গবেষণার মাধ্যমে এমন তথ্য প্রকাশ করে সতর্ক করেছে সায়েন্স নামের জার্নাল। নদীতে ভেসে থাকা বা জলের স্রোতে বয়ে যাওয়া পাতা যখন নদীবক্ষে জমে তখন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক তাদের পচন ধরায়। নদীতে বসবাসকারী পোকামাকড় সেগুলো খায়, অন্যদিকে এই পোকামাকড়রা আবার মাছেদের খাদ্য। খাদ্যশৃঙ্খলের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের একে ওপরের এই নির্ভরশীলতা চলে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে। কিন্তু এই পচনের হার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কীটপতঙ্গ পাতা থেকে কার্বন শোষণ করার সুযোগ পায় না, তার আগেই বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গত হয়। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টা ক্যাপস বলেছেন মানুষের ক্রিয়াকলাপ নদীর কাজ করার মৌলিক উপায়গুলোকে পরিবর্তন করে ফেলছে আর বিষয়টি বেশ উদ্বেগের। পচনের হার বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন চক্র এবং জলে বসবাসকারী পোকামাকড় এবং মাছ জাতীয় প্রাণীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। জলজ জীবেদের জন্য এই উদ্ভিদের আবর্জনা খাদ্যের প্রধান উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে অক্ষাংশ হ্রাসের সাথে পচনের হার সাধারণত বৃদ্ধি পায়। মধ্য আমেরিকা, আমাজন অববাহিকা, পশ্চিম আফ্রিকা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পচনের হার অনেক বেশি। আবার পৃথিবীর মধ্য অক্ষাংশের অনেক এলাকায় যেখানে মানুষের প্রভাব রয়েছে, যেমন মধ্য ইউরোপ, পূর্ব চীন, মধ্য উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব দক্ষিণ আমেরিকা এবং জাপান প্রভৃতি এলাকায় পচনের হার অনেক বেশি দেখা গেছে। অন্যদিকে উত্তর এশিয়া, পূর্ব স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর-পূর্ব কানাডায় পচনের হার ধীর। গবেষকদের মতানুসারে পচনের হারের বৃদ্ধির কারণ হল উচ্চ তাপমাত্রা এবং বর্ধিত পুষ্টির ঘনত্ব। এবং এই দুটিই মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত। মানুষের প্রভাব যত হ্রাস পাবে তত নদীতে আরও কার্বন সঞ্চিত থাকবে, সুতরাং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস পাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

 

ছবি ঋণ – অমরজিত কুমার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 20 =