মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মাছ, নেপথ্যে গাড়ির টায়ার

মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মাছ, নেপথ্যে গাড়ির টায়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা।
Posted on ৩১ জুলাই, ২০২২

গ্রীষ্ম পড়লেই সলোমন মাছে ছেয়ে যায় ওয়াশিংটনের রাজ্যের নদী এবং খাঁড়িগুলি। প্রজননের জন্য প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে আসে এই বিশেষ প্রজাতির মাছ। অনেকটা আমাদের ইলিশের মতো। তবে গতকয়েক বছরের ছবিটা খুব আশঙ্কাজনক। নদীতে মাছ আসছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মারা যাচ্ছে! হাজার হাজার সলোমনের মৃত্যু হচ্ছে নিয়মিত।
পরিবেশকর্মী থেকে প্রাণীবিদ— সকলকেই স্বাভাবিকভাবে উদ্বিগ্ন ও আশঙ্কিত। প্রথমে তাদের মনে হয়েছিল নদীর জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। তাই মৃত্যু হচ্ছে মাছেদের। কিন্তু গবেষণায় সেরকম কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারপর টক্সিকোলজিস্টদের দীর্ঘ তিন-চার বছরের গবেষণার পর জানা গিয়েছে, কীটনাশক বা অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাব নয়, এমনকী, আর্সেনিক কিংবা অ্যান্টিমনির মতো কোনো ভারি ধাতুর উপস্থিতিতেও নয়, মাছের এই গণমৃত্যুর আসল কারণ হল প্লাস্টিক দূষণ! আর সেই প্লাস্টিক দূষণের উৎস সাধারণ বর্জ্য নয়। ক্ষয়ে যাওয়া গাড়ির টায়ার!
২০২০ সালে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কিত একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার। সেখানে উঠে এসেছিল, টেক্সটাইল ফাইবারের পর মাইক্রোপ্লাস্টিকের সবচেয়ে বড়ো উৎস হল গাড়ির টায়ার। এমনকি টায়ার থেকে ন্যানোপ্লাস্টিকও তৈরি হচ্ছে বলে সন্দেহ করেছিলেন তাঁরা। ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবার নিশ্চিত করল সেই আশঙ্কাকেই। ওয়াশিংটনের স্নেক রিভার, ইয়াকিমা কিংবা কলোম্বিয়া নদী তীরবর্তী অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু টায়ার নির্মাণ ও মেরামতকারী কারখানা। সেখান থেকেই ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিক। মূলত, টায়ার তৈরিতে প্রাকৃতিক রাবার ছাড়াও ব্যবহৃত হয় ৬-পিপিডি-কুইনোন নামের একটি বিশেষ রাসায়নিক যৌগ। এই যৌগের শৃঙ্খলই কাজ করে ন্যানো-প্লাস্টিক হিসাবে। যা শুধু প্লাস্টিক হিসাবেই বিপজ্জনক নয়, বিষাক্তকর পদার্থও বটে। এই রাসায়নিক যৌগটির জন্যই মৃত্যু হচ্ছে সলোমন মাছদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − eleven =