মিথেন গ্যাস নির্গমন বাড়ছে

মিথেন গ্যাস নির্গমন বাড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পৃথিবীতে গরম যেমন বেড়ে চলেছে তেমনই অতি ভারী বৃষ্টি ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো বিশ্ব উষ্ণায়নের মোকাবিলার একমাত্র উপায়। দুর্ভাগ্য, এখন বিভিন্ন দেশ নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে, তাতে একবিংশ শতাব্দীর শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়তে পারে ২.৬ ডিগ্রি থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত। ভারতের মতো গরম, আর্দ্র দেশে উষ্ণায়নের এই হার এক ভয়ানক পরিণামের সঙ্কেত দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী চালক মিথেন গ্যাস নির্গমন। বিশ্বব্যাপী ১৫০টি দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে মিথেন গ্যাসের নির্গমন ৩০% কমানোর। কিন্তু নতুন এই গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে গত পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমন আগের চেয়ে দ্রুত বেড়েছে। আর্থ সিস্টেম সায়েন্স ডেটাতে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা বলেছেন যদি পৃথিবীতে বাসযোগ্য জলবায়ু বজায় রাখতে হয় তবে এই প্রবণতাটি বন্ধ করতে হবে। বায়ুমণ্ডলে মিথেনের ঘনত্ব এখন প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২.৬ গুণ বেশি। বিগত ৮০০,০০০ বছরে সর্বোচ্চ। গবেষকদের মতে এই মুহূর্তে, গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য অনেকটা মরুভূমির মরূদ্যানের মতো দূরের বলে মনে হচ্ছে। তবে সেটা মরীচিকা না হওয়াই অভিপ্রেত।
মিথেন একটি স্বল্পস্থায়ী কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস যা জলাভূমির মতো প্রাকৃতিক উত্স বা কৃষিক্ষেত্র, জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ল্যান্ডফিল থেকে নির্গত হয়। নির্গমনের পর প্রথম ২০ বছরে, মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় বায়ুমণ্ডলকে প্রায় ৯০ গুণ বেশি দ্রুত উত্তপ্ত করে। মিথেন সংক্রান্ত নীতি সত্ত্বেও, নতুন অনুমান অনুসারে, গত দুই দশকে মিথেনের মোট বার্ষিক নির্গমন ৬১ মিলিয়ন টন বা ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়লা খনন, তেল ও গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার, গবাদি পশুপালন এবং ল্যান্ডফিলগুলোতে পচনশীল খাদ্য ও জৈব বর্জ্য থেকে নিঃসরণ বৃদ্ধির কারণে এই নির্গমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সম্ভবত অস্ট্রেলিয়াই গত দুই দশকে মানুষের কার্যকলাপ থেকে মিথেন নির্গমন হ্রাস করতে পেরেছে। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন বা বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের ৬৫% সরাসরি মানুষের ক্রিয়াকলাপের জন্য ঘটছে। গবেষকদের আশঙ্কা, এই নির্গমন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি তার প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে আর এর পরিণতি আমরা ইতিমধ্যেই অনুভব করতে শুরু করেছি।