মিথোজীবী শৈবালে লুকিয়ে থাকা ভাইরাস কী প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করছে?

মিথোজীবী শৈবালে লুকিয়ে থাকা ভাইরাস কী প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করছে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১০ জুন, ২০২৩

সমুদ্রের ১ শতাংশেরও কম অংশ জুড়ে প্রবাল প্রাচীর পাওয়া যায়। সমস্ত পরিচিত সামুদ্রিক প্রজাতির প্রায় এক-চতুর্থাংশের আবাসস্থল এই প্রবাল প্রাচীর। তারা সমুদ্রের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন ওষুধের সন্ধান দেয়।
প্রবাল হাজার হাজার আন্তঃসংযুক্ত ছোটো ছোটো প্রাণী বা পলিপ দ্বারা গঠিত আর এই পলিপের কোশের ভিতরে আণুবীক্ষণিক শৈবাল বসবাস করে। উদ্ভিদ সদৃশ শৈবাল ও প্রবাল একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এই আণুবীক্ষণিক শৈবালের সাথে তাদের একটি বিশেষ মিথোজীবী সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটি উভয় জীবেরই উপকার করে। প্রবাল হল প্রাণী, তারা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না তাই নিজেরা খাবার তৈরি করতেও পারে না। পলিপ যেমন শেওলা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে তেমনি পলিপও শেত্তলাকে পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করে। প্রবাল ও শৈবালের একে অপরের উপর নির্ভরশীলতা বা অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে সমগ্র প্রবাল প্রাচীর বাস্তুতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে।
কমিউনিকেশনস বায়োলজি নামক পত্রিকায় ওএসইউ কলেজ অফ সায়েন্সের গবেষকের দল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রবাল প্রাচীর বা কোরাল রিফের ক্ষতির উপর আলোকপাত করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে এক অভিযান হয় যার নাম ছিল – তারা প্যাসিফিক অভিযান। এই অভিযানে প্রায় ১০০,০০০ কিলোমিটার যাত্রা করা হয় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের জলের কাছাকাছি প্রবাল বাস্তুতন্ত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই অভিযানের সংগৃহীত নমুনা থেকে গবেষকরা প্রবালে বসবাসকারী শৈবালের জিনোম পরীক্ষা করেন।
পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন আংশিকভাবে এই প্রাচীরের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন সমুদ্রের জল খুব উষ্ণ হয়, প্রবালগুলো তাদের কলাতে বসবাসকারী সিম্বিওডিনিয়াসি গোত্রের ডাইনোফ্ল্যাজেলেট নামে মিথোজীবী শৈবালকে (জুক্সানথেলা) বের করে দেয় যার ফলে প্রবাল সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। একে বলা হয় কোরাল ব্লিচিং। এই সময় প্রবালটিকে মৃত বলা চলে না কিন্তু তারা আরও বেশি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চাপের মধ্যে থাকে এবং তাদেরে মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
ওরেগন স্টেটের গবেষক কালিয়া বিস্টোলাস বলেছেন যে এই জলবায়ু পরিবর্তনের মতোই, ভাইরাল সংক্রমণও শেত্তলা এবং প্রবালের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এখন বিজ্ঞানীদের কাছে এই মিথস্ক্রিয়াগুলি কীভাবে কাজ করতে পারে তার একটি ব্যাখ্যা রয়েছে।তারা প্রবালের জিনোমের মধ্যে লুকানো একটি খুব সাধারণ আরএনএ ভাইরাস খুঁজে পেয়েছেন যা একটি নন-রেট্রোভাইরাল ডাইনোফ্ল্যাজেলেট-সংক্রমিত +ssRNA ভাইরাস যাকে ডাইনোআরএনএভি বলা হয়। রেট্রোভাইরাসের মতো নন-রেট্রোভাইরাসগুলো সাধারণত হোস্টের জিনোমে সংস্থাপিত হয় না।
বিস্টোলাসের মতে প্রায় সব জীবই তাদের জিনোমের মধ্যে অতীতের ভাইরাল সংক্রমণের অবশিষ্টাংশ বা এন্ডোজিনাস ভাইরাল উপাদান বহন করে থাকে। এগুলো অনেকটা ঐতিহাসিক রেকর্ডের মতো এবং সেগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রেরণ করা যেতে পারে।
কখনো কখনো, যখন একটি জীবের উপর কোনোরকম চাপ থাকে (যেমন তাপমাত্রা), তখন ভাইরাল জেনেটিক উপাদান সকলের অগোচরে একটি জীবের জিনোম থেকে বেরিয়ে তার হোস্টকে সক্রিয় করে তোলে। শেওলা ও প্রবালের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে এই আরএনএ ভাইরাস ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত চাপের কারণে (যেমন জলবায়ু পরিবর্তন) প্রবালগুলোতে রোগ দেখা দেয়।
তারা ওশান ফাউন্ডেশন এবং ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এই গবেষণাকে সমর্থন করেছিল, এবং এই গবেষণায় মেইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং একাধিক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + two =