মিশরী মানুষের ঐতিহাসিক দাঁত

মিশরী মানুষের ঐতিহাসিক দাঁত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুলাই, ২০২৫

৪,৮০০ বছর আগের এক মানুষের দাঁতের ভেতর লুকিয়ে থাকা রহস্য আজ আধুনিক বিজ্ঞান উন্মোচন করেছে। এই প্রথমবারের মতো প্রাচীন মিশর থেকে পাওয়া গেছে একটি সম্পূর্ণ মানবের জিনোম-ক্রম। দাঁত থেকে পাওয়া ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, প্রথমদিকের পিরামিডগুলি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিল নীলনদের তীরে। এ আবিষ্কার শুধু প্রাচীন মিশরের ইতিহাস নয়, মানবজাতির বিবর্তনের চিত্রেও যোগ করে এক নতুন ধাঁধা। এই ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে মিশরের দক্ষিণাঞ্চলের নুওয়ারাত নামক প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায়, কায়রো থেকে প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। একে কবর দেওয়া হয়েছিল বন্ধ করা মাটির পাত্রে। তাঁর দাঁত বলছে, এই প্রাচীন পুরুষটির জিনে রয়েছে উত্তর আফ্রিকার প্রাগৈতিহাসিক কৃষিজীবীদের ছাপ। সাথে মেসোপটেমিয় উপত্যকার (আজকের ইরাক) মানুষেরও চিহ্ন। সুতরাং হাজার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের এক দলিল এই দাঁত। পাশাপাশি এঁর হাড়েও পাওয়া গেছে বয়সের ছাপ। ঝুরঝুরে হাড় ও আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত এই ব্যক্তি হয়তো ৬০ বছর বয়সে মারা যান, যা সে সময়ের মানুষের ক্ষেত্রে বিরল। তাঁর মেরুদণ্ডের অবস্থা বলে, তিনি হয়তো একজন মৃৎশিল্পী ছিলেন। দিনের পর দিন শক্ত মেঝেতে বসে মাটির পাত্র গড়তেন। ১৯৮৫ সালে, ডিএনএ সংগ্রহের প্রথম চেষ্টা হয়েছিল মিশরীয় মমি থেকে। তখন আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে শুদ্ধ তথ্য মেলেনি। গবেষণাটি ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট, লন্ডনের পন্টাস স্কোগলুন্ড ও তাঁর দল চালান। এবার মমি নয় বরং মমিফিকেশন বা মমি বানানোর জন্য দেহ প্রস্তুত করার আগের দেহাবশেষ ব্যবহৃত হওয়ায় মিলেছে বিশুদ্ধ প্রাচীন জিনতথ্য। যদিও এটি কেবলমাত্র একজন মানুষের জিনোম। পুরো মিশরীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না এই একটি সমাধিস্থ দেহ প্রাচীন মিশর ছিল বিবিধ কৃষ্টি আর জিনের সমষ্টি। মধ্যপ্রাচ্য, সাহারা-নিম্নবর্তী আফ্রিকা ও লেভান্তের সঙ্গে যুক্ত এক সেতু। মিশরের জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের জিন বিশেষজ্ঞ ইয়াহিয়া গাদ বলেছেন, ‘এটি আণবিক ইজিপ্টতত্বের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে প্রয়োজন আরও জিনোম, আরও খনন, আরও প্রমাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =