মৃত্যুমুখে দেশের দীর্ঘতম নদী, সংকটে ইতালি

মৃত্যুমুখে দেশের দীর্ঘতম নদী, সংকটে ইতালি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা।
Posted on ১৫ জুলাই, ২০২২

দৈর্ঘ্য মাত্র ৪০০ মাইল। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ছ’শো কিলোমিটার। ইতালির এই নদীর নাম পো। ইতালির দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে চওড়া নদী। এই নদীর বাণিজ্যিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। প্রাচীনকাল থেকে এই নদীপথেই বাণিজ্যতরী পাড়ি দিত অ্যাড্রিয়ান সাগরে। তবে আজ এই নদীকে চেনাই দায়। চড়া পড়ে গেছে তার গোটা উপত্যকায়। জলের ধারা ক্ষীণ। শুকনো নদী- উপত্যকায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নৌকা, স্টিমারের কঙ্কাল। হ্যাঁ, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে মৃতপ্রায় কোটিয়ান আল্পস থেকে জন্মানো এই নদী। বিগত ৭০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সাক্ষী ইতালি। ইতিমধ্যেই জলসংকট দেখা দিয়েছে গোটা ইতালিজুড়ে। পাঁচটি প্রদেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। তবে খরার প্রভাবে পো-এর এহেন দুরাবস্থায় আশঙ্কিত পরিবেশবিদরা।
সাধারণত এই নদী দিয়ে গড়ে ১৮০৫ ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয় প্রতি সেকেন্ডে। বর্তমানে যা নেমে এসেছে মাত্র ১৪৫-এ! তারপর, পো-এর জলতলের গভীরতা কমেছে প্রায় ২৬ ফুট! সেই কারণে সংকীর্ণ হয়ে গেছে তার গতিপথ। তাতে জীবিকাহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। সেচকার্য বন্ধ হওয়ায় থমকে আছে জোয়ার-বাজরার ফলন। মাত্র এক বছরে এই ঐতিহ্যশালী নদীর মহাদুর্যোগে পড়ার অন্যতম কারণ জলবায়ুর চরম পরিবর্তনে ইতালিতে চলতে থাকা খরা আর মানুষের তৈরি করা দূষণ। গত শীতে আশঙ্কাজনকভাবেই কমেছিল তুষারপাতের মাত্রা। স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৩ গুণ কম বরফ পড়েছিল আল্পসে। আর সেই কারণেই চলতি গ্রীষ্মে জলপ্রবাহে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। পাশাপাশি অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দ্রুত বাষ্পীভূত হচ্ছে নদীর জলও। পো-এর এই অবস্থার পিছনে দায়ী মানুষও। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই পো-এর উপকূলবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে একাধিক কল-কারখানা ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার জেরে ক্রমশ উষ্ণতা বেড়েছে গোটা অঞ্চলটার। বেড়েছে কার্বন নির্গমনের হার। তাছাড়াও নদীর জলে ক্রমাগত মিশেছে নানা ধরনের দূষক। পারতপক্ষে যা রুক্ষ করে তুলেছে আঞ্চলিক জলবায়ুকে। খরার শিকার না হলেও, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দূষণের জেরে পো-র বাস্তুতন্ত্র ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। সম্প্রতি একটি পৃথক গবেষণা জানাচ্ছে এমনটাই। সবমিলিয়ে, এই নদীর দূরাবস্থায় সংকটে পড়েছে প্রায় ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ!