মৃত আগ্নেয়গিরির জীবন লাভ

মৃত আগ্নেয়গিরির জীবন লাভ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জুলাই, ২০২৫

সাধারণত কোনো আগ্নেয়গিরি যদি অন্তত ১০,০০০ বছর ধরে অগ্ন্যুৎপাত না ঘটিয়ে নিষক্রিয় থাকে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হয়। এ হেন আগ্নেয়গিরিকে মৃত আগ্নেয়গিরি বলা হয়। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন কিছু আগ্নেয়গিরি অনেক বছর নিষক্রিয় থাকার পরেও মাঝে মাঝে জীবন্ত হয়ে ওঠে বা অভ্যন্তরীণভাবে সক্রিয় থাকে। বলিভিয়ার উতুরুনকু আগ্নেয়গিরিটি এর একটি জ্বলন্ত প্রমাণ । প্রায় আড়াই লক্ষ বছর নিষক্রিয় থাকা এই আগ্নেয়গিরি মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। ফলে “মৃত” বলতে আসলে কী বোঝায় তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইক কেনডাল এবং তার দল প্রায় ১,৭০০ ক্ষুদ্র ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করে উতুরুনকুর অভ্যন্তরীণ গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। আন্দিজ পর্বতমালার নীচে লুকিয়ে থাকা আল্টিপ্লানো-পুনা আগ্নেয়গিরি সমাহারে একটি বিশাল ম্যাগমার হ্রদ রয়েছে, যা উতুরুনকু সহ আশেপাশের আগ্নেয়গিরিকে মাঝে মাঝেই জীবন্ত করে তোলে।
উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের মাটি প্রতি বছর ০.৪ ইঞ্চি করে উঠছে এবং আশেপাশের ভূখণ্ড নীচু হচ্ছে — তৈরি হচ্ছে প্রশস্ত কিনারা যুক্ত টুপির মতো গঠন( সোমব্রেরো প্যাটার্ন )। এই পরিবর্তনগুলোতে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বা তরল পদার্থের চলাচলের ইঙ্গিত মেলে।
ভূকম্পন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, আগ্নেয়গিরির গভীরে গ্যাস, জলবাষ্প এবং আধা-গলিত শিলার একটি চাপযুক্ত স্তর রয়েছে। এই স্তর থেকেই মাঝেমধ্যে চাপ বাড়ার ফলে আগ্নেয়গিরির কেন্দ্রীয় অংশ ফুলে ওঠে আবার চাপ কমলে বসে যায়।
তবে, গবেষণায় উতুরুনকুর জ্বালামুখের কাছে কোনো বড় আকারের ম্যাগমা ভাণ্ডারের অস্তিত্ব মেলেনি, অর্থাৎ শীঘ্রই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নেই।
স্থানীয় আয়মারা জনগণ দীর্ঘদিন ধরে গন্ধকের ধোঁয়া দেখতে পেতেন, যদিও বিজ্ঞানীরা একে তেমন গুরুত্ব দেননি। ১৯৯০-এর দশকে প্রথম ভূকম্পন সেন্সর এই অঞ্চলে অস্বাভাবিক কম্পন ধরতে সক্ষম হয় এবং উপগ্রহ চিত্রে ৪০ মাইল চওড়া একটা গম্বুজাকৃতির গঠন দেখা যায়।
বিশ্বে প্রায় ১,৪০০ সক্রিয় বা সম্ভাব্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটাকে উতুরুনকুর মতোই নিষক্রিয় মনে হলেও তারা মাঝে মাঝে জেগে ওঠে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও আগ্নেয়গিরির আচরণ বদলাতে পারে — বরফগলনের ফলে চাপ কমে গেলে বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে আগ্নেয়গিরি অপ্রত্যাশিতভাবে সাড়া দিতে পারে।
এখন গবেষকরা ভূগর্ভস্থ পরিবর্তন নিয়মিত নজরদারির লক্ষ্যে নতুন সেন্সর বসাচ্ছেন এবং সময়মতো তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বিপদের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
উতুরুনকু আগ্নেয়গিরি দেখিয়ে দিল, প্রকৃতি কখনোই আমাদের দেওয়া সংজ্ঞা মেনে চলে না। আমরা যাকে মৃত বা নিষ্ক্রিয় বলে মনে করছি সে যে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকবে, নিজেকে জীবিত বলে দাবি করবে না এমন কোনো মানে নেই।

তথ্যসূত্রঃ Proceedings of the National Academy of Sciences ;(15.7.2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 1 =