
মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ দিশা বদলাতে চলেছে। দুনিয়ার চোখ এখন এক মহা-দৃষ্টি সম্পন্ন দূরবীনের দিকে -ত্রিশ মিটার ব্যাসের ‘থার্টি মিটার টেলিস্কোপ’ বা সংক্ষেপে ‘টি এম টি’। মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্য অনুসন্ধানের লক্ষ্যে নির্মীয়মাণ এই বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউনা কিয়া-তে বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আদিবাসী আন্দোলন, পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ এবং আমেরিকার রাজনীতিক সিদ্ধান্তে সেই পরিকল্পনা এখন অনিশ্চিত। হাজার বছর ধরে হাওয়াইয়ের স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে মাউনা কিয়া এক পবিত্র স্থান। সেই পর্বতের চূড়ায় টেলিস্কোপ বসানোকে তাঁরা অপবিত্রতা ও ভূমিদখলের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। ফলে পরিবেশবিদ, আদিবাসী ও নাগরিক আন্দোলনকারীরা গত এক বছর ধরে রাস্তায়, পাহাড়ে এবং আদালতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছে যে, টি এম টি প্রকল্পে তারা আর টাকা দেবে না। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন-এর বাজেটও প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। ফলত, হাওয়াই-ভিত্তিক এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই মঞ্চে প্রবেশ করে স্পেন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, টি এম টি-র নতুন ঠিকানা হতে পারে -লা পালমা। এটি ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের এক আগ্নেয়গিরি দ্বীপ। সেখানে উচ্চভূমি আছে, পরিকাঠামো আছে, এবং আছে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও। স্পেনের বিজ্ঞানমন্ত্রী ডায়ানা মোরান্ত ২৩-এ জুলাই এক্স হ্যান্ডেল (Twitter)-এ বলেন—“আমরা চাই ভবিষ্যতের জ্যোতির্বিজ্ঞান স্পেন থেকেই পরিচালিত হোক। আমরা প্রস্তুত।” স্পেন সরকার ইতিমধ্যেই ৪০০ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ ঘোষণা করেছে, এবং টি এম টি বোর্ডে প্রস্তাব জমাও দিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তিনটি মেগা টেলিস্কোপ নির্মাণাধীন:
১. ত্রিশ-মিটার টেলিস্কোপ (৩০ মিটার) – স্থান নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা।
২. বিপুলাকার ম্যাজেলান টেলিস্কোপ (২৫ মিটার) – চিলিতে নির্মাণাধীন।
৩. ইউরোপীয় অতি বৃহৎ টেলিস্কোপ (৩৯ মিটার) – এটিও চিলিতে, ইউরোপীয় অর্থে তৈরি হচ্ছে।
স্পেন ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় টেলিস্কোপ প্রকল্পে বড় বিনিয়োগকারী। তারা জানিয়েছে, টি এম টি-র জন্য বরাদ্দ অর্থ অন্য কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার অসুবিধা ঘটাবে না। অর্থ আসবে স্পেনের প্রযুক্তি উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ইউরোপীয় তহবিল থেকে। তবে এখানে এক প্রযুক্তিগত ফারাক রয়েছে। মাউনা কিয়ার উচ্চতা ৪০৫০ মিটার। পাতলা বাতাস, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে কম বাধা। অপরদিকে লা পালমার উচ্চতা ২২৫০ মিটার। আলোকরশ্মিকে তুলনায় বেশি বায়ুমণ্ডল পার হতে হয়, ফলে দেখার স্পষ্টতায় কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
তবুও উল্লেখ্য, লা পালমা দ্বীপেই অবস্থিত রোক দে লোস মুচাচোস পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই এটি প্রায় ২০টিরও বেশি টেলিস্কোপের ঠিকানা। সেই কারণে বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের কাছে এটি একটি সম্ভাব্য বিকল্প হয়ে উঠেছে। যদি বাস্তবে টি এম টি লা পালমায় স্থাপিত হয়, তবে স্পেন হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনের মহাকাশ গবেষণার নতুন কেন্দ্র। এখন নজর টি এম টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-কূটনীতির দিকে।
সূত্র : Spain bids €400 million to host mega telescope at risk in US budget cuts by Elizabeth Gibney ; Nature News (24 July, 2025) .