আমরা দু জনাতে ভাই, পশুর আর ধুন্দুল,
আমরা সুন্দরবনে থাকি, আমরা মশগুল।
পশুর আর ধুন্দুল, একই গনের (জেনাস) দুটি ভিন্ন প্রজাতি। সুন্দরবনে নদীর চরে পাশাপাশি থাকে। দুজনাকে দেখতে প্রায় যমজ ভাইয়ের মত। সাধারনভাবে দুজনাকে পার্থক্য করা যায় না। এমনকি, উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা ও ফেল করে। এদের শ্বাসমূল থাকে। শ্বাসমূল গুলো দেখতে একেবারে মহিষের শিঙের মত। নিচের দিকটা চওড়া আর ক্রমশঃ সরু হয়ে ডগাটা ছুঁচল। এইগুলো খুব শক্ত কারন গৌণ বিভাজনের ফলে উড তৈরি হয়। তাই এইগুলো গাছকে শ্বাসক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক বল যোগায়। পশুর আর ধুন্দুল এর গাছ থাকলে সুন্দরবনে মানুষজনকে সতর্ক ভাবে চলাফেরা করতে হয়, নইলে যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে। শ্বাসমূলের ছুঁচল ডগাতে ক্ষত বিক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাঝারি ধরনের গাছ। প্রচুর ডালপালা থাকে। দূর থেকে গাছগুলো ঘন সবুজ ও জমাট দেখায়। বসন্তে ফুল আসে, এবং ঠিক পরেই ফল ধরে। ঘন ডালপালায় ফুলের মঞ্জুরিকে খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ফলগুলো চোখে পড়ার মত। ফল দেখে ধুন্দুল আর পশুর চেনা যায়। ধুন্দুলের ফল আকৃতিতে কতকটা বেল ফলের মত এবং আয়তনেও তাই। এই ফলের বাইরেটা শক্ত ও বাদামী রঙের। তুলনামূলক ভাবে, পশুরের ফল ছোট, গোল, বাইরেটা সবুজ রঙের ও শক্ত হয় । দুটি গাছেই অসংখ্য ফল ধরে। ফল পাকলে জলে পড়ে যায়, যেহেতু এরা সাধারণত নদীর পাড়ে জন্মায়। ফল জলে ভাসতে থাকে, এমনকি বহুদূরে ভেসে যেতে পারে। তারপর ফল নদীর চরে কোথাও আটকে থেকে যায়। ফলের ত্বক ক্রমশঃ নষ্ট হতে থাকে, তা থেকে বীজ বের হয় ও অঙ্কুরিত হয়। পশুর ও ধুন্দুল জলে অতিরিক্ত লবনের মাত্রা সহ্য করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ণের বৃদ্ধিতে এদের কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
পশুর ও ধুন্দুল এর কাঠ খুবই শক্ত হয়। সুন্দরবনে নদীতে ও মোহনায় মাঝিদের যে নৌকাগুলো দেখা যায়, সবই প্রায় এই দুই প্রজাতির গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি। কাঠের রঙ হালকা লালচে হয়। মাঝিরা এই গাছের কাঠ নিয়ে খুব যত্ন সহকারে নৌকা বানায়। এই গাছের কাঠের নৌকা দীর্ঘ দিন ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও বাড়ির আসবাব পত্র তৈরিতে এই কাঠের ব্যবহার প্রায় দেখা যায়।