রঙ পাল্টাতে অক্টোপাসের ক্যালোরি ক্ষয়

রঙ পাল্টাতে অক্টোপাসের ক্যালোরি ক্ষয়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

অক্টোপাস ছদ্মবেশে ধরতে ওস্তাদ, শিকারীদের চমকে দিতে আর শিকার থেকে নিজেকে আড়াল করতে মুহূর্তে এরা রঙ পরিবর্তন করে। প্রথমবার সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা পরিমাপ করেছেন অক্টোপাসের রঙ পরিবর্তন করার জন্য কত শক্তি প্রয়োজন। তারা দেখেছেন, একজন মানুষের ৩০ মিনিট জগিং করতে যত ক্যালোরি খরচ হয় রঙ পরিবর্তন করতে অক্টোপাসের প্রায় তত ক্যালোরি পোড়ে।
সমস্ত প্রাণী অভিযোজনের জন্য কিছু সুবিধা আর কিছু অসুবিধার মুখোমুখি হয়। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ও অধ্যাপক কির্ট ওনথাঙ্ক, বলেছেন অক্টোপাসের রঙ পরিবর্তনের সুবিধা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছুই জানেন। কিন্তু রঙ পরিবর্তন করতে গিয়ে অক্টোপাসের কী হয় তা জানা ছিল না। অন্যান্য অনেক সেফালোপডের মতো, অক্টোপাসের ত্বকে ছোট ছোট অঙ্গের একটা বিশেষ সেট থাকে, যা ক্রোমাটোফোরসনামে পরিচিত। প্রতি ক্রোমাটোফোর রঞ্জকের একটা ছোটো, প্রসারিত থলি থাকে যার সাথে পেশীর রশ্মি সংযুক্ত থাকে, যা অনেকটা চাকার স্পোকের মতো। যখন পেশি শিথিল হয়, তখন রঞ্জকের থলি একটা ছোটো বিন্দুতে পরিণত হয়, যা দেখতে খুব ছোটো। যখন পেশি সংকুচিত হয়, তখন রঞ্জক থলি ত্বকের খানিকটা অংশে প্রসারিত হয়, আর এর ভেতরের রঙ দেখা যায়। অক্টোপাসের ত্বকের প্রতি বর্গমিলিমিটারে ২৩০ টা ক্রোমাটোফোর থাকে। রঙ পরিবর্তন করার সময় এই পিক্সেলের মতো অঙ্গগুলোর হাজার হাজার ক্ষুদ্র পেশী সংকুচিত হয়। স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে প্রতিটা ক্রোমাটোফোর নিয়ন্ত্রণ করে, অক্টোপাস নানা ধরনের চিত্তাকর্ষক ছদ্মবেশ ধরতে পারে।
ওয়াশিংটনের ওয়ালা ওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা PNAS জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা ১৭টা রুবি অক্টোপাস (অক্টোপাস রুবেসেন্স) থেকে ত্বকের নমুনা সংগ্রহ করে দেখেছেন, এরা ক্রোমাটোফোর প্রসারণ এবং সংকোচনের সময় কত অক্সিজেন খরচ করে। তারপরে তারা প্রতিটা অক্টোপাসের বিশ্রামের সময় বিপাকীয় হারের সাথে এর তুলনা করেন। অক্টোপাস গড়ে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২১৯ মাইক্রোমোল অক্সিজেন ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে রঙ পরিবর্তন করে। বিশ্রামরত অবস্থায় অন্যান্য সমস্ত শারীরিক কার্য সম্পাদন করতে মোটামুটি এরা একই পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে। মানুষের যদি রঙ পরিবর্তনকারী ত্বক থাকত, তাহলে রঙ পরিবর্তন করার জন্য দিনে ৩৯০ ক্যালোরি অতিরিক্ত খরচ করতে হত, যে ক্যালরি মানুষের ২৩ মিনিট দৌড়োনোর সময় খরচ হয়। সেফালোপড ছাড়াও কিছু উভচর, সরীসৃপ, মাছ, সন্ধিপদী প্রাণী, কম্বোজ সহ বিভিন্ন পর্বের প্রাণীতে রঙ পরিবর্তন দেখা যায়। তবে সেফালোপডে দ্রুত রঙ পরিবর্তন হয়। গিরগিটি দ্রুত রঙ পরিবর্তন করতে পারে, তারা কোশের অভ্যন্তরে সিস্টেম ও রঞ্জক নিয়ন্ত্রণ করতে হরমোন ব্যবহার করে। গবেষকদের মতে এই পদ্ধতিগুলো ধীর আর সম্ভবত শক্তি খরচও কম হয়।