রাইবোজ শর্করাই জীবনের আণবিক ভিত্তি?

রাইবোজ শর্করাই জীবনের আণবিক ভিত্তি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ আগষ্ট, ২০২৫

আর এন এ বা রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড এক ধরনের জৈব অণু। এরা জীবিত কোষের জিনগত তথ্য বহন, প্রোটিন তৈরি, এবং বিভিন্ন কোষীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা বিভিন্ন ধাপে আমাদের বংশগতির মূল ধারক ও বাহক ডি এন এ থেকে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় তৈরী হয়। এই গঠনে আরএনএ পলিমারেজ নামক উৎসেচকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। প্রশ্ন হচ্ছে, জীবনের সূচনালগ্নে কীভাবে আর এন এ -র মতো জটিল জৈব অণু তৈরি হয়েছিল? উৎসেচকের সাহায্য ছাড়াই সেই সময় কীভাবে এই অণুগুলি গঠিত হয়েছিল, এবং কেন কিছু নির্দিষ্ট অণুই জীবনের ভিত্তি হয়ে উঠেছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কাজ করে চলেছেন গবেষকরা। স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এক গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক সূত্র আবিষ্কার করেছেন, যা হয়তো এ ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে দেবে।
তাঁরা দেখিয়েছেন, আর এন এ –র অন্যতম গাঠনিক উপাদান রাইবোজ শর্করা অন্য যেকোনো অনুরূপ শর্করার তুলনায় ফসফেটের সঙ্গে দ্রুত যুক্ত হতে পারে। আর এন এ গঠনের জন্য এই সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে Angewandte Chemie জার্নালে।
আর এন এ ও ডি এন এ-র গঠনমূলক একক হলো নিউক্লিওটাইড। এটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত— একটি পাঁচ-কার্বন বিশিষ্ট শর্করা (যেমন- রাইবোজ), একটি ফসফেট গ্রুপ এবং নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষার (যেমন –A, U, G, C)। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়ামিডোফসফেট (ডি এ পি) নামক এক ফসফেট-দাতা অণুর সঙ্গে রাইবোজ অত্যন্ত দ্রুত ফসফোরিলেশন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফসফোরিলেশন মানে হল কোনো জৈব অণুতে ফসফেট মূলকের সংযোজন। একই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য অনুরূপ শর্করা (যেমন অ্যারাবিনোজ, লাইক্সোজ এবং জাইলোজ) কিন্তু রাইবোজের মতো কার্যকর ছিল না।
এছাড়া দেখা গেছে, রাইবোজ মূলত পাঁচ-সদস্যবিশিষ্ট রিং-আকৃতির অণু তৈরি করে, যা বর্তমান আর এন এ ও ডি এন এ-এর সাধারণ গঠন। অন্য শর্করাগুলোতে কিন্তু ৫ ও ৬ সদস্যবিশিষ্ট রিং দুটোই দেখা যায়। আরও দেখা গেছে, চারটি শর্করার মিশ্রণে ডায়ামিডোফসফেট প্রয়োগ করলে এটি প্রধানত রাইবোজের সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া করে, অন্য তিনটি শর্করা মাঝপথে আটকে যায়।
গবেষক রামনারায়ণ কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন, তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, রাইবোজ শুধু যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে তা নয়, নির্দিষ্ট গঠনেও প্রাধান্য পায়, যা আর এন এ তৈরির উপযোগী।

তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন—এই প্রতিক্রিয়া আদৌ জীবনের সূচনার জন্য দায়ী কিনা, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ভবিষ্যতে তাঁরা আদি কোষের মতো কাঠামো গড়ে তার মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন। যদি সেখানেও একই রকম প্রতিক্রিয়া ঘটে, তবে জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে আমাদের ধারণা এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।

সূত্র: “Selection of Ribofuranose-Isomer Among Pentoses by Phosphorylation with Diamidophosphate” by Harold A. Cruz and Ramanarayanan Krishnamurthy, (27.6.2025) , Angewandte Chemie International Edition.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 4 =