আমদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা আদপে ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু কোনও কারণে রেগে গেলে কিছুতেই নিজের রাগকে বশে আনতে পারেন না । এই পরিস্থিতিতে শুধু সেই ব্যক্তিই নয়, বিড়ম্বনায় পড়েন আশপাশের মানুষও। রাগের বশে হঠকারী কাজ যেমন মানুষ করেই থাকেন, তেমনই রাগ কিন্তু ডেকে আনে নানা শারীরিক বিপদও। রক্তচাপ বাড়ায়। যখন তখন স্ট্রোকও ডেকে আনতে পারে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে তাই অনেকেই ভরসা রাখেন ধ্যান বা যোগব্যয়মে। তবে কয়েকটি খাবার রয়েছে, যা খেলে মন শান্ত হতে পারে, রাগ কমতে পারে। এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় যে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, শুধু মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তা নয় অতিরিক্ত রাগ ও তার ফলস্বরূপ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা বা আগ্রাসনও হ্রাস করে। মনে করা হয় আগ্রাসন এবং অসামাজিক আচরণ পুষ্টির অভাবের কারণে তৈরি হতে পারে। আমরা যা খাই তা আমাদের মস্তিষ্কের রসায়নকে প্রভাবিত করে। পূর্বের গবেষণা থেকে জানা যায় যে ওমেগা-থ্রি, সিজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই কেবল শরীরেরই নয়, মনের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে এই অ্যাসিড।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মোট ৩৯১৮ জন অংশগ্রহণকারীকে ২৯টি ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করেন। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ট্রায়ালগুলো ১৯৯৬ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়, এবং গড়ে ১৬ সপ্তাহ ধরে চলে। গবেষকরা ১৬ বছর বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী বয়স্ক ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। সমস্ত ট্রায়ালে বয়স, লিঙ্গ, চিকিৎসা নির্ণয়, চিকিত্সার দৈর্ঘ্য এবং ডোজ সহ ভিন্ন ভিন অবস্থায় একটি লক্ষণীয় স্বল্প-মেয়াদী প্রভাব পাওয়া গেছে, দেখা গেছে আগ্রাসন ২৮% পর্যন্ত হ্রাস করেছে। গবেষকরা মনে করেন যে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়াগুলোকে সক্রিয় রাখে যা আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের শরীরের ভিতরে নানা কাজকর্ম চালাতে যে সব পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অন্যতম এই ওমেগা-থ্রি। যেহেতু অন্যান্য ফ্যাটের মতো ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আলাদা করে শরীর তৈরি করতে পারে না, তাই এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডকে বাইরের খাবারদাবার বা ক্যাপসুল থেকেই গ্রহণ করতে হয়। সামুদ্রিক মাছ এর প্রধান উৎস হলেও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড গোত্রের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডদের পাওয়া যায় কিছু সবজি, সয়া ও ক্যানোলা তেলেও। ওমেগা-থ্রি-র চাহিদা মেটাতে চিকিৎসকরা এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাপসুলও খেতে বলেন।