রাজ্যের জলাশয়ে গাম্বুসিয়া মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত কী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে?

রাজ্যের জলাশয়ে গাম্বুসিয়া মাছ ছাড়ার সিদ্ধান্ত কী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাজ্যের জলাশয়ে প্রায় ১০ মিলিয়ন গাম্বুসিয়া মাছ ছেড়েছে। মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী এই মাছ মশা মাছ নামেও পরিচিত। কিন্তু রাজ্যের স্বাদু জলের জলাশয়ে যেখানে প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় প্রজাতির মাছ রয়েছে তাদের সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক (MoHFW) অনুসারে, অন্ধ্র প্রদেশে ২০২২ সালে প্রায় ৬৩৯১ জন ডেঙ্গি এবং ২০২২ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর এবার ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে: গত ছয় মাসে রাজ্যে ২৩৩৯ টা ডেঙ্গি এবং ১৬৩০ টা ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় মাছ, গাম্বুসিয়া অ্যাফিনিস, পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ মশার লার্ভা খায়। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে গাম্বুসিয়া মশা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এর আর একটি প্রকার রয়েছে যার নাম গাম্বুসিয়া হলব্রুকি (জি হলব্রুকি), যা পূর্বে মশা মাছ নামেও পরিচিত ছিল। গবেষকদের মতে মাছটিকে সাধারণত মশার বংশবৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটি ভালো জৈবিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে ধরা যেতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হতে পারে যাতে রাসায়নিক স্প্রে করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে উত্স হ্রাসের মতো অন্যান্য পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত। জলাশয়ে মাছ ছাড়ার চেয়ে মশার বংশবৃদ্ধিকারী উৎস যেমন জমা জল এবং খোলা নর্দমার সংখ্যা হ্রাস করা, এবং এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মাছের প্রজাতিটি জলাশয়ে ছাড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদ্বেগের কারণও রয়েছে। গাম্বুসিয়া মাছের প্রজনন ক্ষমতা খুব বেশি। একটি মেয়ে প্রজাতি তার জীবদ্দশায় ৯০০ থেকে ১২০০ চারা মাছের জন্ম দিতে পারে। ভারত সহ একাধিক দেশ গাম্বুসিয়াকে ক্ষতিকারক প্রজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। স্থানীয় প্রজাতির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং শিকার করতে পরিচিত, গাম্বুসিয়া কিছু পরিবেশে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যেখানে তাদের খাবার ও বাসস্থানের জন্য অন্যান্য প্রজাতির সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তারা প্রতিযোগী মাছ এবং ব্যাঙাচি খেয়ে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রকাশনা মানবসৃষ্ট প্রজনন আবাসস্থল যেমন সুইমিং পুল বা বাগানের পুকুরে প্রাকৃতিক পরিবেশে মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে গাম্বুসিয়ার প্রজনন এবং ব্যবহারের কার্যকারিতা সমর্থন করে। কিন্তু প্রতিবেদনে, প্রাকৃতিক পরিবেশে বহিরাগত মাছের প্রজাতি ছাড়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে, কারণ তারা স্থানীয় প্রজাতির প্রতিস্থাপন বা অন্যান্য জলজ প্রাণীকে প্রভাবিত করে অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। গৃহস্থালীর পুকুর বা ট্যাঙ্কে যেখানে অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প থাকে না, সেখানে গাম্বুসিয়া মশার লার্ভা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে। এরপরও এসব মাছ প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মশা-মাছের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, গবেষকরা মৎস বিজ্ঞানীদের পরামর্শ দিয়েছেন যাতে তারা নদী অববাহিকায় দেশীয় মাছের প্রজাতির তালিকা থেকে মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন মাছ চিহ্নিত করতে পারে।