মডেলিং রিসার্চ জানিয়েছে সীসার বিষক্রিয়ার প্রভাব বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের ওপর পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক। এর জন্য , বছরে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যু হয়, এবং বায়ু দূষণের জন্যও সীসা দায়ী। এই সমীক্ষায় আরও অনুমান করা হয়েছে যে এই বিষাক্ত ধাতুর সংস্পর্শে আসার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি শিশু গড়ে প্রায় ছয় আইকিউ পয়েন্ট হারায়। সীসা দূষণ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন হৃদরোগ এবং ছোট শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের সমস্যা হয়, যার ফলে বিশ্বব্যাপী সীসাযুক্ত গ্যাসোলিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ এখনও খাদ্য, মাটি, রান্নার পাত্র, সার, প্রসাধনী, সীসা-অ্যাসিডযুক্ত গাড়ির ব্যাটারি এবং অন্যান্য উৎসের মাধ্যমে শক্তিশালী নিউরোটক্সিনের সংস্পর্শে আসতে পারে।
ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার লেখক বিশ্বব্যাংকের দুই অর্থনীতিবিদ। তারা বলেছেন, ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে হৃদরোগের মৃত্যু এবং শিশুদের আইকিউ হ্রাসের উপর সীসার প্রভাবের এটাই প্রথম মূল্যায়ন। প্রধান লেখক বজর্ন লারসেন বলেন তাদের মডেল অনুযায়ী ২০১৯ সালে ৫.৫ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক সীসার সংস্পর্শে এসে হৃদরোগে মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। এটা বিশ্বব্যাপী হৃদরোগে সমস্ত মৃত্যুর প্রায় ৩০ শতাংশ। এর অর্থ হল হৃদরোগের একটা বড়ো কারণ সীসায় উন্মুক্ত হওয়া, তা ধূমপান বা কোলেস্টেরলের চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক।
গবেষণায় বলা হয়েছে যে আনুমানিক ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সীসার বিষক্রিয়ার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা ক্রমবর্ধমান ৭৬৫ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্ট হারিয়েছে, যার ৯৫ শতাংশ ক্ষতি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাংকের গবেষকদের হিসেব অনুসারে ২০১৯ সালে সীসার প্রভাবে ক্ষতির অর্থনৈতিক খরচ আনুমানিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সমান যা বিশ্বব্যাপী জি ডি পি-র সাত শতাংশের সমান।
এনজিও পিওর আর্থ-এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ফুলার বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জরিপকরা রক্তে সীসার মাত্রা অনেক বেশি দেখা যায়। ২৫ টা উন্নয়নশীল দেশে ৫০০০ ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, ধাতব পাত্র এবং প্যান, সিরামিক বাসন, রং, প্রসাধনী এবং খেলনাতে সীসা দূষণের হার খুব উচ্চ। এই কারণেই দরিদ্র দেশগুলিতে সীসার বিষক্রিয়া এত বেশি কারণ রান্নাঘরের জিনিস থেকেই মানুষের শরীরে সীসার বিষ ছড়িয়ে পড়ছে।