রুবিনের ক্যামেরায় তোলা প্রথম চিত্রমালা

রুবিনের ক্যামেরায় তোলা প্রথম চিত্রমালা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ জুলাই, ২০২৫

চিলির আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় অবস্থিত ভেরা সি. রুবিন মানমন্দির সম্প্রতি তাদের তোলা প্রথম চিত্রমালাটি প্রকাশ করেছে। বিশ্ব জুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তা দেখে মুগ্ধ। এই মানমন্দিরটি বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিনের নামাঙ্কিত, যিনি মহাবিশ্বে “ডার্ক ম্যাটারের” অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছিলেন। এই চিত্রগুলো তোলা হয়েছে ৩,২০০ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাযুক্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে। অবজারভেটরির নির্মাণকাজ এপ্রিল মাসে সম্পন্ন হওয়ার পর পরীক্ষামূলক পর্যায়ে এই ছবি তোলা শুরু হয়। মানমন্দিরটি আগামী ১০ বছরে প্রতি রাতে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশের বিশাল বিশাল ছবি তুলবে, যা মহাবিশ্বের অজানা রহস্য, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন, গ্রহাণুদের চলাচল এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণ প্রভৃতি ঘটনাকে জানার পথ খুলে দেবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান রবার্ট উইলিয়ামস বলেছেন, “আপনি যদি মহাবিশ্বের মহিমা দেখতে চান, তবে এই হল তার সঠিক উপায়।“ প্রকাশিত ছবিগুলো থেকে দেখা গেছে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এবং মহাকাশের বিস্ময়কর দৃশ্য। বিশেষ করে, পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ট্রাইফিড এবং লাগুন নামের নীহারিকাগুলির উজ্জ্বল গোলাপি গ্যাস এবং আলোকিত ধুলোর মেঘ। এই নীহারিকা আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে বিপুল পরিমাণ আয়নিত হাইড্রোজেন এবং নবীন বা প্রক্রিয়াধীন তারার ঘনত্ব রয়েছে। এই চিত্র তৈরি করতে রুবিন মানমন্দিরের সিমোনি সার্ভে টেলিস্কোপ ৬৭৮টি আলাদা আলাদা আলোক সংস্পর্শ নিয়েছে, তার জন্য সময় লেগেছে মাত্র সাত ঘণ্টার কিছু বেশি। প্রতিটি চিত্র এক রঙে তোলা হয়েছে এবং চারটি ভিন্ন ফিল্টারের সাহায্যে চূড়ান্ত রঙিন ছবি তৈরি করা হয়েছে।

৮১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই রুবিন অবজারভেটরি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি বৃহৎ প্রকল্প। এটি অত্যন্ত প্রশস্ত ক্ষেত্রের ছবি তুলতে সক্ষম, যার মাধ্যমে মাত্র ৩-৪ রাতের মধ্যেই পুরো দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। তুলনামূলকভাবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ আরও সূক্ষ্ম বিস্তারিত তথ্য নিতে পারে ঠিকই, তবে তারা একই সময়ে আকাশের খুবই ছোট একটি অংশ পর্যবেক্ষণ করে।
এই সাম্প্রতিক ছবি মূলত দর্শনীয় সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল, এটা বোঝানো যে, কীভাবে রুবিনের অত্যাধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরা দ্রুত এবং উচ্চ সংবেদিতার মাধ্যমে আকাশের বিশাল এলাকা স্ক্যান করতে পারে। অবজারভেটরির নির্মাণ প্রকল্পের উপ-পরিচালক সান্দ্রিন টমাস বলেন, “আমরা আকাশ দেখতে ভালোবাসি , সেটাই আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।” এই ছবিগুলো গবেষণার জন্য ব্যবহারযোগ্য তথাকথিত ‘ডেটা প্রোডাক্ট’ নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের প্রতি ভালোবাসা এবং আকাশের সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণের প্রতিফলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =