রেহাই নেই সাগরেরও

রেহাই নেই সাগরেরও

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Default Alt Text

মেরিন পলিউশন বুলেটিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক পণ্য দ্বারা সমুদ্র দূষণ মোকাবিলার জন্য একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। মহাসাগরগুলোর উপর প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাব ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দলটি নির্ধারণ করেছে যে ২০৩৫ সালের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে প্লাস্টিক বর্জ্য ন্যূনতম ৩২% হ্রাস করা প্রয়োজন। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। সময় থাকতে হস্তক্ষেপ না করা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে, কিউশু ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাপ্লাইড মেকানিক্সের গবেষকরা সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ পর্যবেক্ষণ ও ট্র্যাক করার জন্য কাজ করছেন। ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে আনুমানিক ২৫.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের মহাসাগরে প্রবেশ করেছে এবং এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নিরীক্ষণ করা যায় না। গবেষক চিসা হিগুচি ব্যাখ্যা করেন, এই গবেষণায় কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য নদী এবং মহাসাগরের জলে কীভাবে প্রবাহিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তা কীভাবে ভাঙে। প্লাস্টিক বর্জ্য দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে রয়ে যায়। বড়ো বড়ো প্লাস্টিক ধীরে ধীরে ছোটো প্লাস্টিকের কণাতে ভেঙে যায়। যদিও বড়ো আকারের প্লাস্টিক সহজে অপসারণ করা যায়। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্যের আকার যখন ৫ মিমি থেকে ছোটো হয়ে যায় তখন সেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, আর এই মাইক্রোপ্লাস্টিক সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। মাছেরা এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সুতরাং, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ হলেও, মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। ২০১৯ সালের জি২০ ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিনিধিরা ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের বৃদ্ধি বন্ধ করার লক্ষ্যে ওসাকা ব্লু ওশান ভিশন প্রবর্তন করে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই উদ্যোগটি বিশ্বজুড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল উন্নত করতে চায়। গবেষকরা অধ্যয়ন করেছেন বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক ছো্টো কণাতে ভেঙে যেতে কত সময় নেয়। তাছাড়াও তারা নদী থেকে প্লাস্টিক নির্গমন পথ এবং সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত অন্যান্য সম্পদ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। গবেষণা অনুসারে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সমুদ্রে প্রবেশকারী প্লাস্টিক বর্জ্য ৩২% বা ৮.১ মিলিয়ন টন হ্রাস করা গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে মহাসাগরগুলোতে ৫০% এরও বেশি প্লাস্টিক হ্রাস পাবে। প্লাস্টিক দূষণে রাশ টানতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে, একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিকল্পের ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। হতাশ না হয়ে সবাই মিলে এই দুর্দশা থেকে মুক্তির পথ অনুসন্ধান করতে হবে ।