
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেন মেডিসিন এবং পেন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক যৌথ গবেষণা দল ৫০ কোটি বছরের পুরনো এক প্রোটিন বিন্যাস কাঠামোর গাণিতিক নীতি উদ্ঘাটন করেছেন। এই প্রাচীন ব্যবস্থাটি হলো “কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম”। এটি দেহের বাইরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্যতম পুরনো অংশ। যা নির্ধারণ করে, কোন কোন বহিরাগত উপাদান বন্ধু (যেমন ওষুধ, ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম ) হিসেবে গণ্য হবে আর কোনটি শত্রু।
গবেষক জ্যাকব ব্রেনার জানান, এই কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম যেমন দেহকে রক্ষা করে, তেমনি সিস্টেমটির কার্যবিধানে ভুল হলে দেহের নিজের কোষকেও আক্রমণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্রোক বা রক্তনালির ক্ষতি হলে এই সিস্টেম মস্তিষ্কের কোষে হামলা চালিয়ে অবস্থা আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
গবেষক দল ল্যাব পরীক্ষার পাশাপাশি জটিল গাণিতিক সমীকরণ ও কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, কীভাবে এই সিস্টেম সিদ্ধান্ত নেয় আক্রমণ চালানোর। তারা “ক্রিটিক্যাল পারকোলেশন থ্রেশহোল্ড” নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপের সন্ধান পেয়েছেন। এটি নির্ভর করে, কোনো বহিরাগত উপাদানের গায়ে কমপ্লিমেন্ট-প্রোটিনের সংযুক্তির ঘনত্বের ওপর। যদি প্রোটিনগুলো কাছাকাছি থাকে, তাহলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আর দূরত্ব বেশি হলে প্রতিক্রিয়া বন্ধ থাকে।
এতে গবেষকরা লাইপোসোম নামের অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির কণার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, কীভাবে ঘনত্বের পরিবর্তনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় হয়। এই আবিষ্কার আগামী দিনে ওষুধ তৈরিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, বিশেষ করে ভ্যাকসিন তৈরিতে, এম আর এন এ থেরাপি বা সি এ আর টি চিকিৎসায়, যেখানে অতিরিক্ত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া বড় বাধা।
এছাড়া, গবেষকরা পারকোলেশন তত্ত্বের (অনুস্রবন তত্ত্ব) সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মিল খুঁজে পেয়েছেন, যা ১৯৫০-এর দশকে মূলত খনিজ তেল উত্তোলনের সময় ব্যবহৃত হতো। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যদি কোনো বনে গাছগুলো ঘনভাবে থাকে, তাহলে আগুন দ্রুত ছড়ায়; ঠিক তেমনি, কমপ্লিমেন্ট প্রোটিনগুলো ঘনভাবে থাকলে পুরো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই গবেষণাকে শুধু কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম নয়, বরং রক্ত জমাট বাঁধার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া (ক্লটিং ক্যাসকেড) বা অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার মতো জটিল অন্যান্য জৈব ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা। এতে জটিল চিকিৎসা ও ন্যানো-ওষুধের নকশা আরও নিরাপদ ও দক্ষভাবে তৈরি করা যাবে।