রোমানিয়ার জীবন্ত পাথর নিয়ে আজও অব্যাহত গবেষণা!

রোমানিয়ার জীবন্ত পাথর নিয়ে আজও অব্যাহত গবেষণা!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা।
Posted on ২০ আগষ্ট, ২০২২

রোমানিয়ায় প্রত্যন্ত গ্রাম কোসটেসতিতে দেখা যায় অভিনব ও বিস্ময়কর এক পাথরের। যে কোনও জীবের মতোই যার আয়তন বৃদ্ধি পায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে!
অদ্ভুত এই বৈশিষ্টের জন্য রোমানিয়ার এই বিশেষ পাথর পরিচিত জীবন্ত পাথর নামে। অবশ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটির নাম ‘ট্রোভান্ট’। ১৯৯০-এ জিওলজিস্ট জি. এম. মার্গোকি প্রথম এই পাথরটির কথা বর্ণনা করেন তাঁর ‘দ্য টার্সিয়ারি ইন ওল্টেনিয়া’ গ্রন্থে। ট্রোভান্ট নামটি তাঁরই দেওয়া। তবে তিনিই যে এই পাথরের আবিষ্কর্তা, এমনটা নয়। বহুযুগ আগে থেকেই রোমানিয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল এই পাথরের দৈবিক ক্ষমতার সম্পর্কে। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আয়তন বাড়ার এই বৈশিষ্টটিকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা এই পাথর দিয়েই তৈরি করেন বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ট্রোভান্টের আণবিক গঠনে। এই পাথরগুলির একটি শক্ত কোর থাকে। তার বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট-সমৃদ্ধ বেলেপাথরের মোটা আস্তরণ থাকে। বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে এলেই যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সিমেন্টের মতো শক্ত হয়ে যায়। বৃদ্ধি পায় আয়তনও। কয়েক মিলিমিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত বড়ো হতে পারে এই ধরনের পাথরের আয়তন। আয়তনে ছোট পাথরও ১০০০ বছরে বৃদ্ধি পেতে পারে ৪-৫ সেন্টিমিটার। তবে শুধু আয়তন বৃদ্ধিই নয়, একা হাঁটাচলাও করতে পারে ট্রোভান্ট! আসলে, জলের সংস্পর্শে এলে পুরো পাথরের বৃদ্ধি হয় না। বরং, তার বিভিন্ন খাঁজ থেকে জন্ম নেয় বাড়তি অংশ। দেখলে মনে হবে, ঠিক যেন ডাল-পালা মেলে ধরছে কোনো বৃক্ষ। এই ধরনের অঙ্গবৃদ্ধির জন্যই স্থান পরিবর্তন করে ট্রোভান্ট। ভূতাত্ত্বিকদের অনুমান, ট্রোভান্টের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ বছর আগে। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে বিশেষ ধরনের লাভা থেকে তৈরি হয়েছিল সেগুলি। তারপর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলি। কখনো আবার খণ্ডিত হয়ে জন্ম দিয়েছে ছোটো প্রস্তরখণ্ডের। কিন্তু গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই পাথর আসলে ভিনগ্রহী।