ভারতের আদিম মানব ঝিলাম নদীর তীরে ঘোরাঘুরি করত আর তারা পশুর মাংস খেত। মাত্র দশহাজার বছর আগে ভারতে আদিম মানবের মাংস খাওয়ার ইতিহাস জানা ছিল। কিন্তু ঝিলামের তীরে প্রাপ্ত প্রমাণ বলছে আদিম মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকেই মাংস খেত। ৩০০ থেকে ৪০০ হাজার বছর আগে প্লিস্টোসিনের শেষের দিকে, কাশ্মীর উপত্যকায় ঝিলাম নদীর কাছে অন্তত তিনটি প্রাচীন হাতি মারা গিয়েছিল। পরে সেগুলো পলিতে ঢাকা পড়ে যায়, আর আদিম মানুষের তৈরি ৮৭ টা পাথরের সরঞ্জাম সহ এদের ২০০০ বছর আগে পাম্পোর নামে শহরের কাছে পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমানে ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজির কিউরেটর অদ্বৈত জুকার সহ গবেষকরা পাম্পোর সাইট থেকে হাতির জীবাশ্মের ওপর দুটো নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তাদের গবেষণায় এই জীবাশ্মের পরিচয়, মৃত্যুর কারণ ও এতে মানুষের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
এই জীবাশ্ম বেশ বিরল। দ্বিতীয় গবেষণায় হাড়ের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই হাতি প্যালেওলোক্সোডন নামক হাতির এক বিলুপ্ত প্রজাতির অন্তর্গত। এই হাতিদের ওজন আজকের আফ্রিকান হাতিদের দ্বিগুণেরও বেশি। আজ অবধি, শুধুমাত্র একটাই জীবাশ্ম হোমিনিন, যা নর্মদা মানব বলে পরিচিত তা ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া গেছে। পুরানো এবং সাম্প্রতিক হোমিনিন প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ থেকে বোঝা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানবের দেখা পাওয়া যেত। ১৯৮২ সালে জীবাশ্ম আবিষ্কারের আগে, জীবাশ্মবিদদের কাছে উপমহাদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের উপস্থিতির একমাত্র নিদর্শন ছিল পাথরের হাতিয়ার। জুকার জানান এই জীবাশ্মের নিদর্শন থেকে তারা নিশ্চিত, অন্তত কাশ্মীর উপত্যকায় হোমিনিনরা ছিল, আর তারা হাতিও খেয়েছিল। পাম্পোর সাইটে তাদের তৈরি পাথরের সরঞ্জামগুলো হাতির হাড়ের মজ্জা নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই হাতিয়ারগুলো সম্ভবত ব্যাসাল্ট শিলা দিয়ে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এই শিলা স্থানীয় এলাকায় পাওয়া যায় না, গবেষকদের মতে কাঁচামাল অন্য জায়গা থেকে আনা হয়েছিল। পাম্পোর অঞ্চলে পাওয়া হাতির জীবাশ্মের মধ্যে বেশিরভাগ অবশেষ একটা পূর্ণ পুরুষ হাতির ছিল। এর খুলির ভেতরে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায়, এই হাতিটা দীর্ঘকালীন সাইনাসে ভুগছিল। তবে হাতিটাকে শিকার করে মারার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কারণ এর কোনো হাড়ের টুকরোয় বর্শা বেঁধার দাগ নেই। হয়তো সাইনাসে ভুগে হাতিটা অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিল। এর আগে ভারতে হোমিনিনদের কোনো বড়ো প্রাণী খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই হাতির জীবাশ্ম ও মানুষের হাতিয়ার থেকে বোঝা যাচ্ছে ভারতীয় আদিম মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকে পশুর মাংস খেতে অভ্যস্ত ছিল। পাথরের হাতিয়ার ও হাতি কসাইয়ের গবেষণা কোয়াটারনারি সায়েন্স রিভিউ- তে প্রকাশিত হয়েছে। আর হাতির ট্যাক্সোনমির ওপর গবেষণা জার্নাল অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।