লেপার্ড সিলের ‘শিশুদের ছড়া’

লেপার্ড সিলের ‘শিশুদের ছড়া’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ আগষ্ট, ২০২৫

কুমেরু অঞ্চলের নিঃসঙ্গ শিকারি লেপার্ড সিল। তার আচরণ নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা হয়েছে। জানা গেছে, প্রজনন ঋতুতে পুরুষ লেপার্ড সিলরা জলের তলায় নির্দিষ্ট সুরে গান গায়। সে গান গঠনগতভাবে মানব শিশুকে শোনানো ছড়ার সাথে তুলনীয়। UNSW Sydney-এর ইকো-ধ্বনি বিজ্ঞানের গবেষকরা ১৯৯০-এর দশকে রেকর্ড করা পুরুষ লেপার্ড সিলের শব্দ নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এই ডাকে স্বরের সময়গত বিন্যাস এবং’ ইনফরমেশন এনট্রপি’r মাত্রা মানুষের সংগীত, বিশেষত ছোটদের ছড়ার সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে মিলে যায়। ‘এনট্রপি’ এখানে ব্যবহৃত হয়েছে শব্দ-বিন্যাসের পূর্বানুমেয়তা ও পুনরাবৃত্তির পরিমাপক হিসেবে। অক্টোবরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু- এই ঋতুতে পুরুষ লেপার্ড সিলরা এক সুনিয়মিত সাঙ্গীতিক আচরণ প্রদর্শন করে। প্রায় দৈনিক ১৩ ঘণ্টা ডুবে থেকে ও ২ মিনিট ভেসে থেকে গান পরিবেশন করে। এই রীতিতে ৫টি নির্দিষ্ট কন্ঠধ্বনিগত একক ব্যবহার করে। এ গুলি তাদের সমগ্র জনসমষ্টির মধ্যে অভিন্ন, তবে প্রতিটি পুরুষ নিজস্ব ধারায় এই ধ্বনিগুলির বিন্যাস করে থাকে। ফলে প্রতিটি সিলের গান হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র। সেটি তার নিজস্ব ধ্বনি পরিচয়। গবেষকদের মতে, এই সংগীত প্রজননের উদ্দেশ্যে স্ত্রী সিলকে আকর্ষণ করে। একই সঙ্গে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি নিজস্ব এলাকা তৈরির সংকেত পাঠায়। শব্দ সংকেতের উচ্চ পর্যায়ের কাঠামোবদ্ধতা (low entropy) শব্দের দীর্ঘ দূরত্বে প্রক্ষেপণ এবং সংকেতের নির্ভুল ব্যাখ্যাকে সহজতর করে। গবেষক লুসিন্ডা চেম্বার্সের ভাষায়, “সংগীতের পূর্বানুমেয়তা দূরবর্তী শ্রোতাদের নির্ভুলভাবে বার্তা বুঝতে সহায়তা করে এবং প্রেরকের পরিচয় চিহ্নিত করে।”এই গবেষণায় অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে লেপার্ড সিলের সংগীতের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যথা কুঁজওয়ালা তিমি, বোতল-নাক ডলফিন, কাঠ বিড়াল বানর। মানুষের ক্লাসিক্যাল, রোমান্টিক, বিটলস এবং ছড়ার গানের সাথেও তুলনা করা হয়েছে। দেখা গেছে লেপার্ড সিলের সংগীত মানবশিশুর ছড়ার মতোই সহজ, পুনরাবৃত্তিমূলক ও গঠনমূলক। এটি প্রাণীবিদ্যায় দীর্ঘ দূরত্বে ধ্বনির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের দক্ষ পদ্ধতির এক উন্নত দৃষ্টান্ত। গবেষকরা আগামীতে পরিচয় জ্ঞাপক ডাক যাচাই করতে চান। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সিলের স্বতন্ত্র গান একটি নির্দিষ্ট পরিচয়বাহী সংকেত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেমন ডলফিনের পরিচয় জ্ঞাপক শিস। এছাড়া প্রজন্মান্তরে ধ্বনি-গঠনের বিবর্তন এবং ধ্বনিগত নতুন তত্ত্ব নিয়ে পরীক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে। গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে, বরফে ঢাকা নীরব মহাদেশেও, প্রাণীরা জটিল শারীরবৃত্তীয় ও সামাজিক সংকেত রচনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। লেপার্ড সিলের এই সংগীত আচরণ কুমেরু বাস্তুতন্ত্রে প্রজনন কৌশল ও শব্দ-ভিত্তিক যোগাযোগের জৈব-প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

সূত্র : Leopard seal song patterns have similar predictability to nursery rhymes by Lucinda E. H. Chambers, et.al ; Scientific Reports(31 July, 2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − seven =