
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে, বিজ্ঞান- গবেষকেরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে পথে নামছেন। দাবি এক – ‘বিজ্ঞান বাঁচাও’। গবেষণা তহবিল ছাঁটাই , সরকারি বিজ্ঞান কর্মচারীদের ব্যাপক ছাঁটাই – এইসব ঘটনা বিজ্ঞানীদের এই অচেনা ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য করছে। সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়া, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা, সরকারের বিরুদ্ধে নতুন প্রতিবাদী কন্ঠ গঠন করা ইত্যাদি, প্রভৃতি। গত ছয় সপ্তাহের ঘটনাক্রম অনেক বিজ্ঞানীকে এই প্রতিবাদের পথ গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ট্রাম্প-প্রশাসন ফেডারেল অর্থ অনুদান বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। তারা ঘোষণা করেছে যে তাদের মতে যেসব প্রকল্প বৈচিত্র, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি (DEI) কর্মসূচির কথা বলে সেই প্রকল্পগুলি পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজনে বাতিল হবে। মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার টাকায় চ লা প্রকল্পগুলির জন্য ‘পরোক্ষ ব্যয়’ নাটকীয় হারে কমানো হয়েছে। আদালতগুলি অবশ্য সাময়িক ভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এ থেকে একটি বার্তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে- বিজ্ঞানের জন্য, সরকারি সমর্থন বিপন্ন। ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীদের টনক নড়ে ওঠে। তাদের এই প্রতিবাদী সক্রিয়তা এবার ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। ৩ মার্চ, ৪৮টি উদ্বিগ্ন বৈজ্ঞানিক সংগঠন, কংগ্রেসের কাছে একটি যৌথপত্র দেয়। পত্রে, আহ্বান জানানো হয় আইন প্রণেতারা যাতে করদাতাদের টাকায় চ লা গবেষণাকে রক্ষা করেন । “এই প্রশাসনের কাজকর্ম ইতিমধ্যেই আমেরিকার বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে। তার পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে,” তারা জানান। মার্কিন প্ল্যানেটোরি সায়েন্সের নীতিগত বিষয়ে বিজ্ঞানীরা, তাদের স্বর শক্তিশালী করার জন্য একটি নতুন পেশাদার সংগঠন গঠনের কথা বলছেন। মিসৌরি রাজ্যের সেন্ট লুইস, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিশেষজ্ঞ পল বার্নের মতে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক আক্রমণগুলি, এটিকে আরও জরুরি করে তুলেছে”। বেসরকারি গবেষকদের বিজ্ঞানের সেন্সরশিপ, পরোক্ষ-ব্যয় হ্রাস, এবং মহাকাশ এবং বায়োমেডিকেল গবেষণায় কমতির বিরুদ্ধেও মত গঠন করা হচ্ছে। এমনকি এই গবেষকের সংগঠনগুলিকেও একজোট হতে আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী ৭ মার্চ, দেশব্যাপী ৩২টি শহরে ‘বিজ্ঞানের পক্ষে দাঁড়াও’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াশিংটন ডিসিতে মুখ্য অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হবে পাঁচজন গবেষকের দ্বারা। এরা বেশিরভাগই নিজেদের প্রাথমিক অসহায়তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একত্রিত হয়েছেন। ” যেভাবে সবাই একত্রিত হচ্ছে তা বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা একা নই । আমাদের মতন কত লোক যে একই রকম অনুভব করেন তা স্বস্তির কারণ” – বলেছেন এমা কোর্টনি, যিনি নিউ ইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির জীববিজ্ঞানের গবেষক-ছাত্রী । এই সমাবেশের আরেকটি লক্ষ্য, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলিকে বিজ্ঞানের প্রভাবের বিষয়ে সংবাদ প্রচারে উৎসাহিত করা, বলেছেন স্যাম গোল্ডস্টাইন, যিনি গেইনসভিলের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলা স্বাস্থ্য গবেষক এবং ওয়াশিংটন মিছিলের সহ-আয়োজক। বিজ্ঞান গবেষণা আজ সংকটে। সংকটে কত গবেষক। তবু তাদের কন্ঠ বলিষ্ঠ হচ্ছে দিনকে দিন। এ কোনো ব্যক্তি সংকট নয়, এ সংকট সমগ্র জাতির সংকট।