শকুনের সংখ্যা হ্রাসে প্রভাব পড়ছে মানুষের মৃত্যু হারে

শকুনের সংখ্যা হ্রাসে প্রভাব পড়ছে মানুষের মৃত্যু হারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ জুলাই, ২০২৪
শকুন

এখন কথাটা প্রাচীন যুগের শোনাবে। অথচ মাত্র ৩০-৪০ বছর আগের কথা। বাইপাসের ধাপার মাঠে, খালের ধারে খোলা জায়গায় দলে দলে শকুন আসত। এখন তো গোটা রাজ্যেই শকুন প্রায় বিরল হয়ে গিয়েছে। দেখা পাওয়াই ভার। ১৯৯০-এর দশকে প্রবর্তিত একটি গবাদি পশুর ব্যথানাশক ভারতবর্ষে শকুনের সংখ্যাকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। অথচ এক সময়ে ভারতে শকুনের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। কিন্তু বর্তমানে সারা ভারতে মাত্র কয়েক হাজার শকুন বেঁচে আছে। অনেকে হয়তো ভাববে যে ভালোই হয়েছে, পরিত্রাণ পাওয়া গেছে এই মৃত প্রাণী খেকো পাখিদের থেকে। কিন্তু এর জন্য মানুষকে মূল্য দিতে হল অনেক। এক নতুন গবেষণা প্রকাশ করেছে যে শকুনের মৃত্যুর প্রভাব প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের গবেষকদের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে শকুনের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ফলে প্রভাবিত জেলাগুলোতে মানুষের মৃত্যুহার ৪%-এরও বেশি বেড়েছে। ‘স্যানিটেশন শক’-এর ফলে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বছরে আনুমানিক ৬৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এ শুধু ভারতের সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীতেই কমেছে শকুন। এর কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অনেক দেশ। ভারতও। খোঁজ করে জানা গেল, যে সব শকুন অকালে মারা গিয়েছে তারা প্রায় সকলেই কিডনির রোগে ভুগেছে। কিডনির রোগের কারণ ডাইক্লোফেনেক নামে এক ওষুধ। এই ওষুধ গবাদি পশুর রোগ উপশমে ব্যবহার করা হত। ১৯৯৪ সালে ভারতে ভেটেরিনারি ডাইক্লোফেনাক ড্রাগের আবির্ভাব হয়। এটির প্রবর্তনের মাত্র দশ বছরের মধ্যে, বাস্তুতন্ত্রে, শকুনের সংখ্যা আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন থেকে কমে কয়েক হাজারে নেমে আসে। মৃত গবাদি পশুর শরীরে থাকা ডাইক্লোফেনেক চলে যেত শকুনের শরীরে। ফল হল মারাত্মক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারতের প্রায় ৯৯ শতাংশ শকুন মারা যায়। স্ক্যাভেঞ্জার বা মৃতদেহভোজী প্রজাতি শকুন মৃতদেহগুলোকে হাড় বার করে পরিষ্কার করে খায়। কোনো মাংসপেশি ফেলে রাখে না যা পরবর্তী ক্ষেত্রে পচে যেতে পারে। অন্যদিকে কুকুর অথবা ইঁদুর মৃতদেহগুলো ফেলে ছড়িয়ে খায়। ফলে সেগুলো হয় রোগের আখড়া। শকুন ৪০ মিনিটের মধ্যে একটা গোটা মরা গোরু খেয়ে তার কঙ্কাল বার করে ফেলতে পারে। প্রকৃতির পরম বন্ধু শকুন। শকুনের অবর্তমানে পরিবেশকে রোগমুক্ত রাখার দায়িত্ব গিয়ে পড়ে কুকুর, শিয়াল, কাক বা চিলের উপরে। কিন্তু এই কাজ শকুনের মতো অত সুনিপুণ ভাবে করতে পারে না এই প্রাণীগুলো। আবার খাবারের জোগান বাড়লে পথের কুকুরের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে যাবে। যার ফলে র‌্যাবিস রোগের প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা। গবেষণা অনুসারে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, বেশ কিছু জেলায়, যেখানে শকুন থাকত আবার গবাদি পশুর শরীরে ডাইক্লোফেনেক ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই সব জেলাগুলোতে বিভিন্ন কারণে মানুষের মৃত্যুর গড় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪.৭%। প্রতি বছর ১০০,০০০-এর বেশি অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটেছিল। তাই আজ শকুন বাঁচাতে তৎপর আর্ন্তজাতিক মহল। চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হাত থেকে আমরা রক্ষা করতেই পারি এই পাখিদের। ভেবে দেখার সময় হয়েছে, খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে।