শতবর্ষে কোয়ান্টাম তত্ত্বের পুনর্গঠন প্রকল্প – দুই

শতবর্ষে কোয়ান্টাম তত্ত্বের পুনর্গঠন প্রকল্প – দুই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

কোনো কোনো গবেষকের ধারণা, শেষ পর্যন্ত কোয়ান্টাম পুনর্গঠনের স্বতঃসিদ্ধগুলির ভিত্তি হবে তথ্য দিয়ে কী করা যায় এবং যায় না তার হিসাব। ২০১০ সালে শিরিবেলা কোয়ান্টাম তত্ত্বের এইরকম একটা গণিতসূত্র উত্থাপন করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ইতালির পাভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক জিয়াকোনো দারিনো আর পাওলো পেরিনোত্তি। তার মোদ্দা কথা ছিল, তথ্যর অবস্থিতি দেশ আর কালে। সিস্টেমগুলি একে অপরের তথ্যকে সংকেতরূপ দিতে পারবে। আর তত্ত্বগতভাবে প্রতিটি প্রক্রিয়াকেই শেষ থেকে শুরুর মুখে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। ফলত তথ্য সংরক্ষিত হবে। শুধু তাই নয়, এই স্বতঃসিদ্ধগুলিকে সাধারণ ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাবে। বাস্তবে ল্যাবরেটরির মধ্যে এই সিস্টেমগুলিকে নিয়ে কাজ করা যাবে। এইসব নিয়ম দ্বারা চালিত সিস্টেমে দ্বৈতদশা আর বিজড়িত দশা প্রভৃতি যাবতীয় কোয়ান্টাম আচরণের দেখা মিলবে।

একটা সমস্যা হল কাকে স্বতঃসিদ্ধ বলা হবে এবং তা থেকে পদার্থবিজ্ঞানীরা কী সিদ্ধান্ত আহরণ করতে চাইবেন তা নিয়ে। ২০০২ সালে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফ্রি বাব আর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হান্স হালভর্সন তিনটি মূল স্বতঃসিদ্ধর কথা বলেন। এক, নিয়ম না-জানা কোনো অজানা কোয়ান্টাম দশার নকল (ক্লোন) করা অসম্ভব। দুই, দুটি বস্তুর মধ্যে একটির পরিমাপ করে তথ্য সঞ্চারণ কখনোই আলোর চেয়ে দ্রুতবেগে করা যায় না। তৃতীয়টির মোদ্দা কথা হল, একটি তথ্যকণাকে কতটা নিরাপদে বিনিময় করা যাবে তার একটা সীমা আছে। এইসব নিয়মগুলি থেকে দ্বৈতদশা, বিজড়িত দশা, অনিশ্চয়তা, অ-স্থানিকতা (নন-লোক্যালিটি) প্রভৃতি মূল কোয়ান্টাম পরিঘটনাগুলির উদ্ভব ঘটানো সম্ভব।

২০০৯ সালে তথ্য-নিবদ্ধ আর একটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাজির করেছিলেন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাস্লাভ ব্রুকনার আর বোরিভোয়ী দাকিচ। তাঁরাও তিনটি “গ্রহণযোগ্য স্বতঃসিদ্ধ”র প্রস্তাব করেন। এক, কোনো সিস্টেমের সবচেয়ে মৌলিক অঙ্গটি কখনো একটির বেশি তথ্যকণা বহন করতে পারবে না। দুই, কতকগুলি উপ-সিস্টেম দ্বারা গঠিত একটি সিস্টেমের দশাকে সেই উপ-সিস্টেমগুলির মাপজোকের দ্বারাই পুরোপুরি নির্ণয় করা যায়। তিন, একটি “বিশুদ্ধ” সিস্টেমকে অন্য একটি বিশুদ্ধ সিস্টেমে রূপান্তরিত করা যায় (মুদ্রার হেড-টেলের মতন)। দাকিচ আর ব্রুঙ্কনার প্রমাণ করেন, এই অনুমানগুলির সাহায্যে অবধারিতভাবেই কেবল সাবেকি আর কোয়ান্টাম-ধাঁচের সম্ভাব্যতায় পৌঁছন যায়, অন্য কিছুতে নয়। কিন্তু যদি তৃতীয় স্বতঃসিদ্ধটিকে একটু বদলে নিয়ে বলা যয় যে দশাগুলি একে অপরে রূপান্তরিত হয় একটানা, আস্তে আস্তে, একটু একটু করে, তাহলে কিন্তু সাবেকি তত্ত্ব আসবে না, আসবে শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্ব। নিরবচ্ছিন্নতা না থাকলে কোয়ান্টাম তত্ত্ব থাকবে না।

কোয়ান্টাম তত্ত্বের পুনর্গঠনে আরও একটা পরিমার্গ হল ‘কোয়ান্টাম বেইসিয়ানিজম’। এটির উদ্‌গাতা কার্লটন কেভস, ক্রিস্টোফার ফুখস, আর রিডিগার শ্চ্যাক। ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে এঁরা প্রস্তাব করেন যে, এই বিশ্বর বাস্তব রূপের সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক উপকরণগুলির কোনো সম্বন্ধ নেই। এই উপকরণগুলি নিছক একটা উপযোগী কাঠামো যার সাহায্যে কোনো সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করার পরিণাম কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রত্যাশা ও বিশ্বাস গড়ে তোলা যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই বিশ্ব শুধুই কোয়ান্টাম নিয়মাবলীর অধীন নয়। এমন হতে পারে যে কণাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মূলে কোনো মৌলিক নিয়মাবলী কাজই করে না। জন হুইলার এই সম্ভাবনাটিকে বলেছিলেন “নিয়মহীনতার নিয়ম”। তার অর্থ, প্রকৃতিকে নিয়মহীনভাবে কতকগুলি ফালিতে কেটে নিয়ে বোধগম্য করার নাম হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব। একথা বলেছেন সেভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদান কাবেল্লো। তিনি বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে এই ফিনফিনে অস্বাভাবিক যুক্তির ভিত্তিতে কোয়ান্টাম তত্ত্বে উপনীত হওয়া অসম্ভব। “কিন্তু যদি সেকাজ করে দেখিয়ে দিই, তখন কী হবে? যারা মনে করে কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রকৃতির ধর্মাবলীকে প্রকাশ করে, তারা তখন জোর আঘাত পাবে”।

এর আগের কিস্তির জন্য দ্রষ্টব্য বিজ্ঞানভাষ ২৫ এপ্রিল, ২০২৫।

শতবর্ষে কোয়ান্টাম তত্ত্বের পুনর্গঠন প্রকল্প-এক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =